সুজয়া ধর
মন্দিরে ঈদ, মসজিদে বড়দিন বা গীর্জায় দূর্গোৎসব ; না এ কখনোই শোনা যায় না। কিন্তু খোদ দেশের রাজধানীতে স্রোতের বিপরীতমুখী ঘটনা , ৮০০ বছর ধরে হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া দরগাতে বসন্ত পঞ্চমী উদযাপন হয়ে চলেছে।জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ এই উৎসবে শামিল হয়।
দরগায় এই উৎসব শুরুর একটা সুন্দর গল্প আছে। দিল্লির এই অঞ্চলে ১২৩৮-১৩২৫ সালে হজরত নিজামুদ্দিন বাস করতেন, যার নামে এই দরগার নামকরণ করা হয়। তিনি একজন সুফি সন্ত ছিলেন। তিনি তিনটি ধারায় বিশ্বাস করতেন- ভালোবাসা (ishq), জ্ঞান (aql) এবং শিক্ষা ( ilm); জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের বিচার ও সেবা করতেন। তাঁর কোনো সন্তান ছিল না, তবে বোনের পুত্র খাজা তাকিউদ্দিন নূ কে সন্তান স্নেহে ভালবাসতেন। হঠাৎ ই খাজা নূ ইহলোক ত্যাগ করেন; দুঃখে সন্ত নিজামুদ্দিন ভেঙ্গে পড়েন , তাঁর মুখের হাসি মুছে যায়। এমন সময় তাঁর অন্যতম প্রিয় ভক্ত গায়ক কবি আমীর খসরু তাঁর হাসি ফিরিয়ে আনেন। ঘটনাচক্রে বসন্ত পঞ্চমীর সকালে কবি দেখেন একদল হলুদ বস্ত্র পরিহিতা গ্ৰাম্য মহিলা হাতে সর্ষে ফুল নিয়ে গান গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কৌতূহল বশতঃ কবি তাদের জিজ্ঞেস করেন ‘ কোথায় যাচ্ছেন?’ তারা বলেন, ওই ফুল গান গেয়ে মন্দিরে দেবতাকে উৎসর্গ করবে, এতে ভগবান খুশী হবেন। তৎক্ষণাৎ কবি হলুদ বস্ত্র পরে, হাতে সর্ষে ফুল নিয়ে গান গাইতে গাইতে সন্ত সাধক নিজামুদ্দিনের কাছে পৌছান।প্রিয় ভক্তের এমন আগমনে সন্ত সাধক খুশীতে ঝলমল করে ওঠেন, হাসিতে চারিদিক মুখরিত হয়। দীর্ঘদিন বাদে সন্ত নিজামুদ্দিনের আনন্দের সুত্র ধরেই তাঁর ভক্তবৃন্দ বসন্ত পঞ্চমী উৎসবের সূচনা করেন। সেই ঐতিহ্য আজও তাঁর ভক্তবৃন্দ বহন করে চলেছে।
বসন্ত পঞ্চমীর দিন (১৬ই ফ্রেব্রুয়ারী,২০২১) এই উৎসবে শামিল হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকলাম। অনুষ্ঠান সূচনা হয় দুপুরের প্রার্থনার পর থেকে। মুঘল যুগের শ্রেষ্ঠ কবি মির্জা গালিবের সমাধিস্থল থেকে গান গেয়ে নিজামুদ্দিন বস্তির মধ্যে দিয়ে কাওয়ালী গায়কের দল গান গেয়ে পদযাত্রা করে দরগার দিকে আসতে থাকেন, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অগুনতি মানুষ এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। মাঝখানে অবশ্য সন্তের পুত্রসম খাজা তাজউদ্দীন নুর সমাধিতে হলুদ ফুল ছড়িয়ে দরগায় প্রবেশ করা হয়। এরপর দরগার ভেতরে গায়কের দল হলুদ চাদর বহন করে মাথায় হলুদ ফুলের ডালি নিয়ে গান গাইতে গাইতে দরগার অন্দরে সন্ত সাধক নিজামুদ্দিনের সমাধিতে চাদর বিছিয়ে দিয়ে সর্ষেফুল ছড়িয়ে দেন। কাওয়ালী গায়করা গাইতে থাকেন-
Aaj basant manaley suhangan
Aaj basant manaley
Anjan manjan kar piya
Lambay neher la gaaye
Tukya sovay neend maasi
So jaagay teray bhaag, suhagan
Aaj basant manaley
Rejoice, oh loved one, rejoice,
Spring is here, rejoice.
Don your make-up,
put kohl on your eyes,
Braid your long tresses,
Oh, wake up from your sleep,
Your destiny too has woken up
It's spring here, rejoice.
প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে এই গান চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কবি আমীর খসরুর সমাধিতে চাদর বিছিয়ে ফুল ছড়িয়ে এই উৎসবের শেষ হয়।এই গানের রেশ ধরেই বহু মানুষ তাদের বিশ্বাস নিয়ে জীবনের বিভিন্ন পথে হেঁটে চলে।হিংসা-দ্বেষ ভুলে বসন্ত ঋতুকে আহ্বান এক প্রকার ভালোবাসাকে বরণ করা। তবে দরগার অন্দরে সমাধিস্থলে মহিলা প্রবেশ নিষিদ্ধ; যে কোন ধর্মের পুরুষ প্রবেশ করতে পারেন।
কারোর ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত না করে একটা কথায় বলতে পারি,মানব ধর্মই একমাত্র ধর্ম।আজ থেকে ৮০০ বছর আগের গায়ক কবি আমীর খসরুর চিন্তা ভাবনা কে কুর্নিশ জানাই, তাঁর এই অভিনব ভাবে রং ও ভালোবাসার উৎসব উদযাপন আজ বড়ই দরকার। আশা রাখব আগামীতে কোন লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে না।।
বাহ্ সবার উপরে মাণুষ সত্য তাহার উপরে নাই আর সম্পূর্ণ নতুন তথ্য আর ভারী সুন্দর উপস্থাপনা।
Khub sundor kotha bolli…Thank you Papiya..