হাসান শরিফ
![](https://i0.wp.com/95canvas.com/wp-content/uploads/2023/10/IMG_0189.png?resize=1024%2C544&ssl=1)
পুজোর সাথে আমাদের সকলেরই বেশ কিছু অমলিন স্মৃতি জড়িয়ে আছে বলে আমার গভীর বিশ্বাস। থাকবে নাই বা কেন! পুজোর আগমনীতে নাটকীয়তার সব উপাদানই তো মজুত।
যাদের সাথে মোটেও দেখা হয়ে ওঠেনা, তাদের অনেকেই দেখা দেন মায়ের আগমনীর সাথে। জীবনের দৈনন্দিনতার অমোঘ তালও কি সহজেই কেটে ফেলে ছুটির এই কটি দিন। চেনা মানুষগুলি গাম্ভীর্য ভুলে কিছুটা অচেনার মতই হেসে ফেলেন মাঝে মাঝে। মিষ্টি যিনি খান না, ধা করে পরের পর মিষ্টি খেয়ে ফেলেন। ঘরে থাকতে যার বড়ই ভালো লাগে, তিনিও বন্ধু বান্ধবের আসতে দেরি হলে অধৈর্য হয়ে ওঠেন। যার রান্নাঘরে কাটে সারা বছর , তিনি সন্ধ্যেবেলা সেজে গুঁজে বেরিয়ে পড়েন। বলে যান “আজ বাইরে খেও, বাড়িতে কিন্তু কিছু রাঁধিনি।” রিন্টু বাবার কঠোর চোখের সামনেও বেশ দিব্যি বলে যায়, “ভোরবেলা ফিরব।” আর রিঙ্কি একই কথা একটু ঘুরিয়ে বলে, “পারমিতারা সবাই আছে, আমার ফিরতে রাত হলে চিন্তা করোনা।” ভ্যাবলা মত ছেলেটা প্যান্ডেলে ভলান্টিয়ার হয়ে কাকা, কাকিমাদের ধমকানো শেখে। রাকিবুল মহালয়ার ভোরে রেডিও খুলে বসে আর অষ্টমীর সন্ধ্যেবেলা মসজিদে নামাজ না পড়ে বেরিয়ে পড়ে ঠাকুর দেখতে। অনিয়মকে নিয়ম করে ফেলা এই চারটি দিনে মনে রাখার মত ঘটনা ঘটাই তো স্বাভাবিক।
“ছেলেবেলার পুজো” নিয়ে তাই জানতামই যে অনেক লেখাই জমা পড়বে। লেখাগুলো পড়ে সব থেকে বেশি যেটা ভালো লেগেছে তা হল, লেখাগুলি বড় আন্তরিক, বড় ব্যক্তিগত। আর এই ব্যক্তিগত সত্য আছে বলেই মনের গভীরে দাগ কেটে যায়।
লেখাগুলি পড়ে এটাও বুঝলাম পুজোর চেনা রূপটা কিছুটা হলেও বদলে গেছে। ছোটবেলায় পুজোর একটা মূল আকর্ষণ ছিল দূরে থাকা মানুষদের সাথে দেখা হওয়া। নিউক্লিয়ার সংসারের মাথারা তখনও একটি যৌথ পরিবারের অংশ ছিলেন। আমাদের এই বয়সে মাথার উপরের সেই ছাদ অদৃশ্য হয়ে গেছে। কোথাও মিলিত হয়ে একটি সপ্তাহ কাটানোর মত বাসস্থান এখন নেই বললেই চলে। প্রযুক্তির দৌলতে এখন দূরের মানুষগুলিকে ইচ্ছে করলেই তৎক্ষণাৎ বোতাম টিপে দেখা যায়। তাই দেখা করার, গল্প করার যে আকুলতা একটি বছর লালিত হত আগে, সেটা এখন গায়েব। পুজোর রোমান্টিকতা, গভীরতা এ প্রজন্মের কাছে তাই হয়ত অনেকটা কমেছে। একে তো হারিয়ে ফেলাই বলবো। যাক গে!
পুজো সকলের ভালো কাটুক, আনন্দে কাটুক। নতুন সুখস্মৃতি আরও তৈরি হোক। আর একটা কথা, একবার একটা সত্যিকারের সাক্ষাৎ করলে কেমন হয়? একটা দিন সবাই মিলে একটু পিকনিকের মত কাটালে? পারবেন একটা রোববার নিজের ব্যস্ততা থেকে বের করে আমাদের দিতে? জানাবেন।
প্রতিবার যেমন বলি, এবারও বলি যে অভিযান এবং মৃন্ময় পাশে না থাকলে এই পত্রিকা অনেক আগেই মুখ থুবড়ে পড়ত। ওদের উৎসাহ এবং পরিশ্রম এই পত্রিকার একমাত্র জীবনীশক্তি।
Facebook Comments