Palash Sarkar
এই করোনা আবহে বাচ্চা থেকে বুড়ো বুড়ি সবাই কয়েকটা শব্দ জেনে গেছে.. Mask, sanitizer, social distancing. এখনও লাইনে দাঁড়ালে, বাসে-টেরেনে কান পাতলে শোনা যায়,” দাদা একটু সরে দাঁড়ান, social distancing maintain করুন”।আমি বলবো ভাবি ‘দাদা ওটা social distancing নয় physical distancing, তা নাহলে মানুষ আর সামাজিক জীব থাকবেনা’।
লকডাউনের পর তখনো ট্রেন চালু হয়নি..একবার DN18 এ শ্যামবাজার যাচ্ছি.. বাদুড়িয়া, বেড়াচাপার লোকজন বসে আছে, আর আমরা কয়েকজন বারাসাত থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একজন বলে উঠল,”ভাই, তোমার মুখে Mask কোথায়..?” আমি খুঁজে দেখি কয়েকটা সিট পরে একটা ছেলে Mask না পড়ে বসে বসে মোবাইল ঘাটছে, ছেলেদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। লোকটা আবার চেঁচিয়ে বলল,”তুমি Mask পরনি কেন? তোমার Mask কোথায়?”
ছেলেটা চোখ তুলে বললো, “আছে “।
-কোথায় আছে?
ছেলেটা পকেটের দিকে ইশারা করে বললো:”পকেটে আছে”।
-তা পরনি কেন?
-“কেন, পকেটে রেখেছি তো..!” ছেলেটার অকপট উত্তর।
ভাবলাম: করোনা ছেলেটার পকেটে Mask দেখতে পেয়ে সোশ্যাল ডিসটেন্স মেন্টেন করতে শুরু করবে। এরপর আমি কি মনে হলো প্রথম লোকটার দিকে তাকালাম.. দেখি তার Mask আরো সাংঘাতিক, মুখ ঢাকে তো নাক ঢাকে না, সরু Mask মুখের উপর লেপ্টে আছে..ভাবলাম ইনার ক্ষেত্রে করোনার রুট অফ এন্ট্রি বোধ হয় শুধু মুখ দিয়ে তাই নাক বাদ দিয়ে মুখটা ঢেকে রেখেছে। তবে Mask পড়েছে বলে কথা ..অন্যকে ধমকাতেই পারেন।
আরেকবার বিমানে ফিরছি..এয়ারপোর্টে চেকিং এর পর ফ্লাইট অথরিটি হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল।খুলে দেখার সময় পাইনি, ভেবেছিলাম Mask স্যানিটাইজার হবে। বিমানের সিড়ি দিয়ে ওঠার আগে টিকিট চেক করে একজন বললো,”Sir, you need to wear this PPE “.
-কি PPE? তারমানে প্যাকেটে PPE kit আছে? আমায় এখন এই আলখাল্লা পড়তে হবে..?
এইবার বিমানে ঢোকার মুখে কেবিন ক্রু welcome জানিয়ে বললো,” please use your face shield”.
আমি ভাবছি ..আমি কি করোনা পেশেন্টদের সাথে ভ্রমণ করছি? কোথায় একটু ফুরফুরে শরীরে বিমানে চাপবো। শুধু Mask পড়ে কি হবে না..? এই ভাবতে ভাবতে সিটি গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর এক এয়ার হোস্টেস এসে বলল,”Please put on all these,sir. Your safety is our responsibility”।
অগত্যা পরলাম, চারদিকে দেখে মনে হল একদল সাদা ভূতেদের নিয়ে প্লেনটা উড়ে যাচ্ছে। তবু মনে হলো যাক্ এরা নিশ্ছিদ্র সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে। বিমান যখন মাঝ আকাশে তখন এক এয়ার হোস্টেস খাবার আর কফি দিয়ে গেল। আমার একটু হাসিই পাচ্ছিল।
আমি বললাম,” কিভাবে খাব ম্যাডাম?”
এয়ার হোস্টেস মিষ্টি হেসে বলল,”Face shield আর Mask টা খুলে খেয়ে নিন স্যার”।
দারুন ব্যাপার তো..! খেতে খেতে ভাবলাম ফ্লাইট অথরিটি বোধ হয় করোনাদের অর্ডার দিয়েছে খাবার সময় প্যাসেঞ্জারদের একটু ছাড় দিতে।
মোবাইলে সেলফিতে নিজের বিচিত্র ছবিটা দেখছি আর চারদিকে অন্য যাত্রীদের কাণ্ডকারখানা গুলো দেখতে দেখতে এক সময় দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলাম।
Facebook Comments