এবারের পত্রিকা থেকে একটি পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। সেটিই বরং আগে বলি। ৯৫ ক্যানভাস এখন আর শুধু বারাসাত বা আশেপাশের ৯৫ মাধ্যামিক ব্যাচের মানুষদের মধ্যে সীমিত থাকছেনা। এখন সকলেই এই ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হতে পারবেন। এবারের সংখ্যায় কয়েকটি দারুন লেখা এভাবেই পাওয়া গেছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষার বিভাগীয় প্রধান মোস্তাক আহমেদ "পথের পাঁচালী" ছবি নিয়ে তাঁর পড়াশুনো এবং অনুভূতির কথা বলেছেন। বারাসাত মহাত্মা গান্ধী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অসীম বসাক একটি সময়োপযোগী প্রবন্ধ দিয়েছেন। সাহিত্যিক দেবব্রত দাশ দিয়েছেন একটি কবিতা। সত্যভারতী বিদ্যাপীঠের শিক্ষক উত্তম সাহা দুটি আবৃত্তি শুনিয়েছেন। Christie Caldwell যে সুন্দর লেখাটি দিয়েছেন সেটিকে আমি এখনও শ্রেণীভুক্ত করতে পারিনি সে ভাবে। আত্মকথা জাতীয় কিছু বলা যায় হয়ত, কিন্তু এমন বিভাজনের দরকারই বা কি! থাক না কিছু লেখা নিজের মত। এরকম লেখা ভবিষ্যতে আরো আসবে এবং আমাদের পত্রিকাকে আরো সমৃদ্ধ করবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এঁদের সাথে আমাদের নিয়মিত অংশগ্রহণকারীরাও অবিচ্ছেদ্য এবং অপরিহার্য থাকছেন আগের মতনই। দেবযানী ভট্টাচার্য্যের গল্পটি ছোট হলেও নিটোল এবং অনুভূতিময়। এমন গল্প কমই পড়েছি স্বীকার করতে বাধা নেই। দেবযানী প্রতিবারই চমৎকৃত করেন। আকাশ রায়ের গল্পটি লঘু মনে হলেও আসলে মোটেও লঘু নয়, বরং ভীষণ প্রাসঙ্গিক। আকাশের কাছে ভবিষ্যতে আরো লেখা আশা করি। এঁদের সাথে একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতকে অভিযান ভট্টাচার্য্য গল্পের আকারে পরিবেশন করেছেন। ছোট কিন্তু সুপাঠ্য একটি আলাপচারিতা পেয়েছি সুলক্ষণা সাহা চক্রবর্তীর কাছ থেকে।কৃষ্ণকলি এবং স্বাতী ভট্টাচার্য এবারও কবিতা দিয়েছেন। এবারের বইমেলায় স্বাতীর নতুন কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁকে এই সুযোগে অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখি । সুজয়া ধর এবং অমৃতা পালের ফটোগ্রাফিও আছে। সুজয়া তাঁর ছবিতে বরাবরই একটু ভিন্ন স্বাদ এনে দেন, প্রচলিত ছক ভেঙে নতুন কিছু নিয়ে আসেন আমাদের জন্য। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। আর অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও অমৃতা সময় করে তাঁর ছবি পাঠিয়েছেন বলে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তবে এই বিভাগে ম্যাক্রো-ফটোগ্রাফিতে চমকে দিয়েছেন এই পত্রিকায় নবাগতা মুনমুন মজুমদার। সুজয় দাসের কণ্ঠে এর আগে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে না থাকলে এবার সে অভাবও মিটেই যাবে। আমি বাংলার পটচিত্র শিল্প নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি গোছের কিছু করার চেষ্টা করেছি। সাথে এই একই বিষয়ে একটি প্রবন্ধও পাবেন। একটু বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই সোমনাথ দাশগুপ্তকে।এমন কয়েকজন মানুষ আছেন যারা নিজে কত ভালো লেখেন প্রমাণ দেওয়ার চাইতে অন্য সাহিত্যিকদের (যারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রচলিত অর্থে বিখ্যাত নন) সাহিত্যকর্ম নিয়ে গবেষণা করতে ভালো বাসেন, তাঁদের প্রয়াসকে জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। এই কঠিন এবং মহৎ কাজটি তাঁরা করেন নিজেদের মূল্যবান সময় ও অর্থ ব্যয় করে, কোনরকম প্রত্যাশা ছাড়াই, নীরবে। ধ্যানমগ্ন, কর্মঠ এই মানুষরা আমাদের সম্পদ। সোমনাথ দাশগুপ্ত সেরকমই একজন মানুষ। এবারের সংখ্যায় তিনি মোল্লা নাসিরুদ্দিনকে নিয়ে এযাবৎ লেখা নানা বইপত্রের উপর একটি আলোচনা করেছেন। উনি প্রতিনিয়তই নিজের লেখার পরিমার্জনা এবং উন্নতিসাধন করে চলেন। তাই তাঁর একই লেখা দ্বিতীয়বার পড়লেও পরিবর্তন পেতে পারেন। আমাদের পত্রিকায় তাঁর জন্য দ্বার খোলাই রেখেছি, তিনি নিজেই ইচ্ছেমত তাঁর লেখাগুলি পরিমার্জনা করে প্রকাশ করেন। তাঁর লেখাগুলি বাংলা সাহিত্যে গবেষণার কাজে যে কোন ছাত্র-ছাত্রীর কাছে খুবই মূল্যবান প্রমাণিত হবে আমাদের বিশ্বাস। পত্রিকার তরফ থেকে তাঁকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কয়েকজনের লেখার সাথে একটু ইলাস্ট্রেট করার চেষ্টা করেছি একান্তই ভালো লাগা থেকে। আরও কয়েকটি করার ইচ্ছে থাকলেও সময়ের অভাবে সম্ভব হয়নি। এই বিভাগে কেউ যদি সাহায্য করতে পারেন খুব ভালো হয়। যোগাযোগ করুন 95canvas@gmail.com-এ। পত্রিকার কাজে পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই বন্ধু অভিযান ভট্টাচার্য্য আর মৃন্ময় ঘোষকে। পরিশেষে জানাই আপনাদের সমালোচনা, শুভকামনা সবই হৃষ্ট চিত্তে গ্রহণ করতে চাই। এমনকি পরের সংখ্যায় একটি চিঠিপত্র বিভাগ জাতীয় কিছুও করা যেতে পারে। নির্দ্বিধায় মতামত পাঠান আমাদের ইমেলে। ভালো থাকবেন। - হাসান শরিফ
1 thought on “সম্পাদকীয় – মার্চ ২০২২”
Comments are closed.