দেবব্রত দাশ
কবি কবিতাটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর সহকর্মী দুই বন্ধুকে : জয়ন্ত চক্রবর্তী ও অমিতাভ সাহা
এক তিনদিন পরে আজ অনেক রোদ্দুর... জাফরান ক্ষেত-জুড়ে বেগুনি গালিচা, বানিহাল উপত্যকায় বরফকুচির সাথে বিন্দু বিন্দু স্বর্ণরেণু । সু-উচ্চ তুষার-কিরীটে সোনালি প্রলেপ...কাশ্মীর আজ ভূস্বর্গ । মজিদ-আলতাফ-আনোয়ারের মুখ থেকে খসে গেছে মেঘের অঞ্চল, গুলমার্গ বাসস্টপে ডিলাক্স থেমেছে... পাদানির দু'পাশে যাত্রীধরা সহিসের কিউ । দুই তিনদিন পরে আজ অনেক রোদ্দুর... যাত্রী আজ মিলবেই না হোক দু'চার, তাই কিছু রুজি...কিছুটা সাশ্রয় । তাগড়া জোয়ান দুই গুঁফো কনস্টেবল লাঠিহাতে সামলায় ভিড় । বাস আসে পরপর এগোয় লাইন, মজিদ-আলতাফ-আনোয়ারের চোখ ঘোরে বাজপাখির চোখের মতন... অবশেষে যাত্রী মেলে এক নিসর্গ-পিপাসু । তিন তিনদিন পরে আজ অনেক রোদ্দুর... ঘোড়ার লাগাম হাতে চলেছে মজিদ, ঘরেতে বিবির কোলে ছোট্ট মানিক বুকে-পিঠে এক হয়ে মিশে আছে ক'দিন। খিলেনমার্গ এখনও অনেক দূর... পাইন-ফার-চিনার-পপলার এলোমেলো হাওয়া মেখে উচ্ছল, আলপাতথর লেকে বিস্তর বরফ... যাত্রীরা খুশি হবে স্লেজ গাড়ি চেপে। চার তিনদিন পরে আজ অনেক রোদ্দুর... মজিদের বুকের হাপর নামে ওঠে, অনাহারের ক্লান্তি ওর সারাটা শরীর জুড়ে। চলে তবু...চলে আরও সামনে এগিয়ে, ঘরেতে বিবির কোলে ছোট্ট মানিক। “সামহাল কে বাবুজি...জরা সামহাল কে...” মজিদের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনি তোলে, “চড়াই মে বাজু সামনে রাকখো বাবু... উতরাই মে জরা পিছে।” পাঁচ তিনদিন পরে আজ অনেক রোদ্দুর... সেভেন স্প্রিংয়ের জল পেরিয়ে ওই তো আলপাতথর উঁচুতে, স্লেজে চেপে খুব সুরত যুবতী... যুবক আছাড় খেল মসৃণ বরফে। যাত্রী নিয়ে ফিরে চলে মজিদ, ভেবেছিল যতটা সহজ, ততটা মোটেই নয়... পায়ের নরম মাংসে বেঁধে ধারালো পাথর, একান্ত অভ্যাসবশে শরীর এগিয়ে চলে। ছয় তিনদিন পরে আজ অনেক রোদ্দুর... হঠাৎ মাথার ভিতর অন্ধকার একরাশ, মজিদ দোলে...পাক খেয়ে গড়িয়ে পড়ে খাদের কিনারে, নীচে ঝরনার শব্দ... পেটে খিদের দুর্দান্ত হাঙর। মজিদের ঘুম আসে পাথরের বিছানায়, দ্যাখে --- হাজার বাতির রোশনাই জ্বলে, সারাটা পাহাড় জুড়ে অজস্র চুমকি... ঘরেতে বিবির কোলে ছোট্ট মানিক। তিনদিন পরে আজ অনেক রোদ্দুর... ---------
1 thought on “রোদ্দুরের স্বপ্ন”
Comments are closed.