Site Overlay

অপরাজিতা

অভিযান ভট্টাচার্য্য

“ আমার অনিটাকে একটু দেখিস অপু ৷ ছেলেটা আমার বড় চাপা স্বভাবের৷ নিজের মনে বড় একা ৷” অনির্বাণের সাথে বিয়ের আগে যেদিন অপরাজিতাকে আশির্বাদ করতে অজয় বাবু অপরাজিতার মামার বাড়িতে গেছিলেন, সেদিন অনুষ্ঠান হয়ে যাবার পর বাড়ির ছাদের এককোনে একান্তে অপরাজিতার দু হাত ধরে কথা গুলো বলেছিলেন বৃদ্ধ অজয় বাবু৷ সন্তানসুখ নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথাও গোপন করেননি৷ “ অল্পবয়সে মা হারাল, আমিও সেইভাবে কোনো দিনই সময় দিতে পারলাম না ৷ নিজের চেষ্টাতেই পড়াশুনো, চাকরী বাকরি সব করল ৷ কি যে চায়, কি দিলে যে ও খুশী হয়, বুঝতে বুঝতেই ছেলেটা বড় হয়ে গেল ৷ বাপ হয়ে আজও নাগাল পেলাম না ওর মনের !” 

অজয় বাবু ও তাঁর স্ত্রীর অনেক বেশী বয়সের সন্তান অনির্বাণ, মানে অনি| বড় আদরের ৷ স্ত্রী যখন গত হন, অনি তখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে ৷ তারপর থেকে বাবা হিসেবে আরও বেশী করে অনির প্রতি টান অনুভব করেন অজয় বাবু ৷ কিন্তু কি যেন অপূর্ণ থেকে গেল ৷ অনির মনের অন্তর্জগতের চারিদিকে কি যেন এক দুর্লঙ্ঘ্য দেওয়াল তোলা ৷ ওর মায়ের সে দেওয়াল টপকানোর কিছুটা ক্ষমতা ছিল ৷ কিন্তু, অজয়বাবু অসহায় ভাবে তাঁর পিতৃকর্তব্য নিষ্ঠাভাবে করে গেলেন একটিই অপেক্ষায় – হয়তো অনি নিজে থেকেই সে দেওয়াল সরিয়ে সেই ছোট্টবেলার আদুরে সন্তান হয়ে তার বাবার গলা জড়িয়ে ধরবে ৷ তা আর হল না ৷ উল্টে বার্দ্ধক্য নিবিড় যত হল, পিতৃত্বের ব্যর্থতার আত্মগ্লানি অজয়বাবুর মনে স্থায়ী বাসা নিল ৷

 তবে, ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে এসে অপরাজিতা, মানে অপুকে প্রথমে দেখেই ওনার বড় ভালো লাগে ৷ ভেবেছিলেন, জীবনে অনিকে কিছু না দিতে পারলেও অন্ততঃ একটা নিশ্চিন্ত আশ্রয় দিয়ে যেতে পারছেন৷ অনির তল না পাওয়া মন ঠিক কোল খুঁজে পাবে অপুর কাছে ৷ 

অজয়বাবুর আকুতির মর্যাদা রাখার জন্য সমস্ত মনপ্রাণ ঢেলে চেষ্টা করেছিল অপু ৷ একাকীত্বের অব্যক্ত ব্যঞ্জনা সে বোঝে ৷ ছোটবেলায় বাবা মা দুজনকেই হারিয়ে মামার কাছে মানুষ ৷ নিঃসন্তান মামা-মামী তাকে নিজের মেয়ের মতো করেই মানুষ করেন ৷ কিন্তু শৈশবের শূন্যতা পূর্ণ করা কি অতই সহজ ! অপুও চাপা স্বভাবের ৷ অন্তরের অনপনেয় অতৃপ্তি সে আজীবন উপলব্ধি করেছে ৷ কিন্তু এটাও বুঝেছে, হাজার ভীড়ের মধ্যেও তার সত্ত্বায় মিশে থাকা এই চির একলা মানুষটাকে বয়ে নিয়ে চলাই হয়তো তার ভবিতব্য | হয়তো এই জন্যই অনিকে ও ছাড়তে চায়নি ৷ অনিওতো একা! ভেবেছিল বিয়ের পর বাকী জীবনটা ভেসে বেড়ানোর জন্য অনিকে আঁকড়ে ধরবে ৷ হয়তো অনিও ওকে … |

যে ছ’টা মাস অনি ওর কাছে ছিল, অপু তার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিল অনির জন্য ৷ বিয়ের পর অনির সম্বন্ধে শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়, অনির বন্ধুবান্ধব, অফিসের সহকর্মী এমনকি শাশুড়ির আমলের পরিচারিকা অমলামাসীর কাছ থেকে এত প্রশংসা ও শুনেছিল যে অনির প্রতি ও অন্তরে তীব্র সম্ভ্রম অনুভব করত ৷ হয়তো সেটাই ছিল তার ভালবাসার অভিব্যক্তি৷ অনি প্রায়ই অনেক রাত করে অফিস থেকে ফিরত ৷ অপু অজয়বাবুকে খাইয়ে শোবার ব্যবস্থা করে দিয়ে ব্যালকনিতে কোনো একটা বই নিয়ে বসে পড়বার অছিলায় অপেক্ষা করত অনির জন্য ৷ অনি ফিরলে দরজা থেকেই একরাশ উজ্জ্বল হাসি হেসে ওর কাছ থেকে ওর ল্যাপটপ ব্যাগটা নিয়ে জায়গা মত গুছিয়ে রেখে খাবার গরম করত ৷ খাবার টেবিলে টুকটাক কথা হত দুজনের ৷ নেহাতই প্রয়োজনের কথা ৷ অনির মাথা ধরলে অপু পরম মমতায় ওর মাথা টিপে দিত ৷ বুঝতেই পারত না কখন ক্লান্ত অনি ঘুমিয়ে পড়েছে ৷ ওদের কোনো হানিমুন হয় নি ৷ অফিসের চাপে অনি ছুটির সময় বের করতে পারেনি ৷ শনি রবিবারও অনেক সময় অনি অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকত ৷ মাঝে মধ্যে কোনো রবিবার সময় পেলে একসাথে সিনেমা দেখা, শপিং করা এসব চলত ৷ এই সময়গুলোতে অপুর মনে হত যেন অনি বেশ আড়ষ্ট৷ যেন কর্তব্যের ধাক্কায় সে যন্ত্রের মতো চলছে ৷ মনে মনে এতে বেশ মজাই পেত অপু ৷ ভাবত, “আইটি সেক্টরে কাজ করলে কি হবে ? অনি অন্যদের মতো নয় ৷ এখনও মেয়েদের সাথে ভালো করে মেশার অভ্যেসটাই হয় নি ৷ একেবারে আনকোরা ভালো ছেলে ৷” 

এই ভাবেই ধীরে ধীরে একটা সহজ সম্পর্কের দাম্পত্যের দিকে ওরা এগিয়ে চলেছিল ৷ অন্ততঃ অপুর সেরকমই মনে হত ৷ সব থেকে বড় কথা , অনিকে যে সেভাবে ও পায়না, সেই অভাব ও ভুলে থাকত অজয় বাবুর পিতৃস্নেহে ৷ বাবা মাকে না পাবার জন্য ঈশ্বরের কাছে তার আশৈশব নালিশ ছিল ৷ শ্বশুর বাড়িতে এসে তার মনে হোলো , ঈশ্বর একটু হলেও বোধহয় অপুর অনুযোগ শুনেছেন ৷ এজন্মে মা তার আর পাওয়া হবে না ৷ তবে, অজয় বাবুর মধ্যে ঈশ্বর অপুর হারানো থাবাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন ৷ 

অজয় বাবুর শরীর দ্রুত ভাঙছিল ৷ বার্ধক্য, দ্রুত জরায় রূপান্তরিত হছিল ৷ অজয় বাবুকে সময় মত ওষুধ যোগানো, হেঁসেলের তদারকি, অজয়বাবুর জন্য সঠিক পথ্যের ব্যবস্থা করা – এইসব করেই কখন যে দিন গড়িয়ে রাত্রি আসত! ফাঁকা সময়ে যখন অনির কথা মনে পড়ত, তখন ও চলে যেত অনির ছোট্ট লাইব্রেরীটার সামনে ৷ এইটুকু পরিসরে কত বিবিধ বিষয়ের বই অনি রেখেছে! পছন্দমত একটা বই নিয়ে পড়তে শুরু করত ৷ বইটাও তাকে ব্যস্ত রাখত কিছুটা সময় – কয়েকটা দিন ৷ নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া অফিসটাইমে ফোন করে অনিকে সে ব্যস্ত করতে চাইতো না ৷ এমনিতেই সে মুখচোরা ৷ দু-একবার অপ্রয়োজনে ফোন যে করেনি তা নয় – কিন্তু অনি যে সত্যিই বড় ব্যস্ত থাকে !

বিয়ের ছয় মাসের মাথায় হঠাতই একদিন অফিস বেরোনর আগে জলখাবারের টেবিলে অনি জানাল, কোম্পানী তাকে লন্ডন পাঠাচ্ছে ৷ এই প্রথম বিদেশ যাবার সুযোগ | আপাততঃ দুই বছরের ওয়ার্ক পারমিট-এর ভিত্তিতে ভিসা হচ্ছে ৷ কপালে শিকে ছিঁড়লে এক্সটেনশন হতে পারে ৷ অমলা মাসী চোখ টিপে বলল, “ ঠাকুর যা করে ভালোর জন্যেই করে ৷ বৌমনির হনিমুন না হবার দুক্কু ঠাকুর শুনেচে ৷ এক্কেরে বিলেতী হনিমুন হবে ; কি বল বৌমনি?” 

অপুর কাছে সবটাই বড় অকস্মাৎ ৷ সে আর কি বলবে? টেবিলে অজয়বাবুও আছেন ৷ শ্বশুরের সামনে এসব স্থূল রসিকতা করতে আছে? “অমলা মাসীর না কোন বোধবুদ্ধি নেই ৷” ভাবল অপু ৷ “ আর অনিটাইবা কি? কালকে রাতে শুতে যাবার সময় বলতে পারল না একবার ? এতড় একটা খবর! বলল তো বলল একেবারে হাটের মধ্যে !”

“ তা বৌমার পেলেনের টিকিট তোমার আপিসিই তো দেবে, তাইনা অনিবাবু?” অমলা মাসীর কৌতূহলের শেষ নেই, “ ওপাড়ার ঘোষ বাবুদের ছেলেও তো বিলেতে থাকে ৷ গত মাসে এসে বে করে বৌ নিয়ে আবার চলে গেল ৷ বৌয়ের যাবার খরচা আপিসই দিয়েছে ৷ ঘোষ গিন্নি তো বলল ৷”

“ হ্যাঁ, দেবে ৷ তবে এখনই হয়তো নিয়ে যেতে পারব না ৷ ওখানে গিয়ে ঘরদোরের ব্যবস্থা করতে কিছুটা সময় লাগবে ৷ তারপর ৷” নির্লিপ্তভাবে খেতে খেতে বলল অনি ৷

যাক, অনি তাহলে ওর কথা ভেবেছে! “উফ্, ছেলেটা এত্ত চাপা না!” কপট অভিমানে ভাবল অপু ৷ বহুদিন পর যেন রাশি রাশি আনন্দ বাষ্পের মতন ওর মনের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে ৷ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল অজয়বাবুর দিকে ৷ এতবড় একটা ঘটনা, অথচ অজয়বাবু তো কিছু বললেন না! দেখল, একদৃষ্টে আদরের ছেলের দিকে চেয়ে আছেন বৃদ্ধ ৷ মুখে এক অপার্থিব হাসি ৷ কিন্তু চোখের আলোটা যেন ফিকে হয়ে অন্ধকারের ছায়া নেমেছে ৷ মুহূর্তের মধ্যে তার মনের আকাশের আনন্দ -বাষ্প অদৃশ্য অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ল ৷ ও অতদূর চলে গেলে অজয়বাবুর কি হবে ! কে দেখবে! অপু বুঝতে পারল, অসহায় একাকীত্বের অবশ্যম্ভাবী সম্ভাবনায় অজয় বাবুর মনে ছায়া ফেলছে, যতই ছেলের জন্য গর্বের হাসি দিয়ে চাপার চেষ্টা করুন না কেন ৷ তবে, প্রকাশ্যে অপু হর্ষ বা বিষাদ – কোন অভিব্যক্তিই দেখালো না ৷

এয়ারপোর্টে অনিকে ছাড়তে গিয়েছিল অপু ৷ এই প্রথম এয়ারপোর্টের এত কাছে গেল ও| ট্যাক্সি থেকে লাগেজ নামিয়ে ট্রলিতে তুলে দুজনে একসাথে আন্তর্জাতিক উড়ান টার্মিনালের প্রবেশদ্বারে এল ৷ অনি অপুর কাঁধে আলতো হাত রেখে ছোট্ট করে বলল, “আসি” ৷ অনির ওই ছোট্ট একটু কথার অভিঘাতে কোথা থেকে যেন জমে থাকা একসমূদ্র নোনাজল অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ল অপুর দুই চোখ থেকে৷ অনির বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো ৷ এভাবে কোনোদিন কাঁদেনি অপু ৷ এই ছমাসের দাম্পত্য জীবনে আর পাঁচজন দম্পতি স্বাভাবিকভাবে যে নিভৃত -নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়, তাদের ক্ষেত্রে তা হয় নি৷ অনি কাজে ডুবে থাকত ৷ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ত৷ অপুও তো প্রগল্ভা নয়৷ ওসব বিষয়ে সে গুরুত্ব দেয় নি কোনোদিন ৷ ভেবেছিল, সময় তো আর চলে যায় নি ৷ দিব্যিতো আছে দুজনে ৷ বরং, অনির সংযমকে প্রশংসা করেছিল মনে মনে ৷ সত্যি, অনির মত নিপাট ভালো ছেলে আর হয় না ৷ এই প্রথম অনিকে এত কাছে আঁকড়ে ধরল অপু – তাও এমন এক সময় যখন বাঁধন ছেড়ে দেওয়াই সেই মুহূর্তের দাবী ৷ 

পিঠের ওপর অনির হাতের স্পর্শে অপুর কান্নার দমকটা যেন কমল একটু ৷ “ কি করছ অপু ? সবাই দেখছে ৷” স্বভাবসিদ্ধ ভাবলেশহীনতার মধ্যেও একটু যেন নরম ছোঁয়া ছিল অনির কন্ঠস্বরে ৷ “ইটস এ ম্যাটার অফ মান্থস ৷ কদিন পরেই তো তুমি যাবে। ডোন্ট ক্রাই লাইক এ বেবী ৷ উই উইল মিট সুন!”

অপুর সম্বিৎ ফিরল ৷ দ্রুত চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে হাসিমুখে বিদায় দিল অনিকে ৷ বন্ধ কাঁচের দেওয়ালের বাইরে থেকে চেয়ে রইল অনির যাত্রাপথের দিকে ৷ যতদূর দেখা যায় ! ফেরার সময় অপুর মনে হচ্ছিল, যেন তার দৈনন্দিন জীবনচর্যার একটা অতি প্রিয় অভ্যাস এই মুহূর্তে সে ত্যাগ করে ফিরে যাচ্ছে ৷ সেই সঙ্গে কি যেন এক অজানা আশঙ্কার ভয় ক্রমশঃ তার শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে মিশে যেতে লাগল ৷ অনি সেসবের খবর রাখে না৷ রাখাটা তার উচিতও নয় ৷ তার সামনে এখন আকাশ ছোঁয়ার হাতছানি ৷

অপুর আশঙ্কা সত্যি হল। অনি চলে যাবার একমাসের মাথায় পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলেন অজয়বাবু ৷ শরীরের বামদিক অসাড় হয়ে গেল, কথা জড়িয়ে গেল, স্মৃতিও চলে গেল অংশতঃ | স্ট্রোকটা খাবার টেবিলেই হয় ৷ সব থেকে বড় কথা, অপু সেই মুহূর্তেই বুঝতে পারে কি সাংঘাতিক ঘটনা ঘটতে চলেছে ৷ সংকটের সময়ে ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান রায় কাকু, মামা এবং কিছু প্রতিবেশীর সাহায্যে হসপিটাল-বাড়ী দৌড়দৌড়ি করে সঠিক সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে যদি অপু না নিত, তবে হয়তো বাঁচানো যেত না অজয়বাবুকে ৷ অনিকে কিছুই জানায়নি অপু ৷ সবে ছেলেটা একটা নতুন ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়েছে ৷ এখনও ভালো করে সেটল করতে পারে নি ৷ যতক্ষণ নিজেই সামলাতে পারছে, ততক্ষণ শুধু শুধু অনিকে ব্যস্ত করতে চায়নি অপু ৷ অজয়বাবুকে বাড়ীতে এনে সে নিশ্চিন্ত হয়েছিল যে অন্ততঃ অনির জন্য সে মানুষটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারল ৷ যদিও ডাক্তার রায়কাকু বলে দিয়েছিলেন, “ মন তৈরী রাখিস মা ৷ এসব পেশেন্টের কোন ভরসা নেই ৷ ওপরের ডাক দুমাসেও আসতে পারে, আবার দু বছরেও আসতে পারে ৷ অনিকে জানিয়ে রাখিস |”

অনিকে সবই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানিয়েছিল অপু ৷ বাড়ীতেই চব্বিশ ঘন্টার প্রশিক্ষিত নার্স ও আয়া রেখে অস্থায়ী একটা আইসিইউ করেছিল ৷ সেখানে বসে অনিকে ভিডিও কল করে বাবার সাথে দেখা করাত সে ৷ ভিডিও কলে অনি অপুকে বিলেতে তার আশপাশের রাস্তাঘাট, বড়ী সব দেখাতো মাঝে মাঝে ৷ অনি অপুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রচুর টাকা পাঠিয়েছিল যাতে করে চিকিৎসার জন্য এবং সংসার খরচের জন্য অপুকে চিন্তা না করতে হয় ৷ 

মাস তিনেক পর একদিন অনি জানাল, যে সে ফেমিলি নিয়ে থাকার মতন একটা বড় এপার্টমেন্ট নিয়েছে ৷ ভিসার কাগজপত্র সব ই-মেল করে পাঠিয়ে দিয়েছে অপুকে ৷ অপু যেন দ্রুত বিলেত যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করে ৷ কথাটা শুনে কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল অপু ৷ কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলেছিল, “ বাবার এই শেষ সময়ে ওনাকে একা ফেলে কি করে যাব অনি! মানুষটা বড় অসহায় ৷ তুমি আমাকে আরেকটু সময় দাও ৷” “ ফিউচার ক্যান্ট ওয়েট ফর সামথিং যেটা অলরেডি অতীত হয়ে গিয়েছে অপু ! বি প্র্যাক্টিক্যাল ৷ আমি রায়কাকুর থেকে বাবার ইভেনচুয়ালিটি খুব ভালো করেই জেনে নিয়েছি ইন ক্লিনিকাল পয়েন্ট অফ ভিউ ৷ বাবা খুব দ্রুত ডেটরিয়েট করছে এণ্ড ইউ আর ফাইটিং এ ব্যাটল হুইচ ইজ অলরেডি লস্ট ৷ বাবার সেন্স এমনিতেই কাজ করে না ৷ তুমি আছ কি নেই, তাতে বিশেষ কিছু যাবে আসবে না ৷ আমি কয়েকটা এজেন্সির সাথে কথা বলেছি ৷ ওরা ক্লিনিক্যালি বাবার টেক কেয়ার করে নেবে ৷ আই জাস্ট নিড টু পে দেম হ্যান্ডসামলি পার মান্থ ৷ সব এরেঞ্জ করে ফেলব ৷ তুমি চলে এস ৷”

কথা গুলো চাবুকের মত লেগেছিল অপুর বুকে ৷ এই ছেলেটাকেই সে এত শ্রদ্ধা করত! নিজের ওপরই ঘেন্না ধরে গেল অপুর | সে না হয় বাবা-মা কি জিনিস জানে না, কিন্তু অনি তো ছোটবেলা থেকে তাদের পেয়েছে ৷ তারপরও একটা ছেলে এভাবে বলে কি করে? দৃঢ়ভাবে সপাটে অনিকে তার কথার জবাব ফিরিয়ে দিয়েছিল অপু, “ দেখ অনি তোমার পাশে দাঁড়ানোর মতো যোগ্যতা আমার নেই ৷ আমি জীবনটাকে হার জিত দিয়ে মাপতে পারি না ৷ হয়তো আমার জেতার মত কোনো যোগ্যতাই নেই, তাই মাপবার সাহস হয় না ৷ তবে এটুকু বলতে পারি, অতি নিকটজন যখন অসহায়ভাবে জীবনের শেষ পারানির অপেক্ষায় থাকেন, তখন জেনেশুনে তাঁকে ত্যাগ করাটা খুব ক্যুৎসিত দেখায় ৷ আমায় ক্ষমা কর অনি ৷ আমি পারব না! পারলে বাবা একেবারে চলে যাওয়ার আগে একবার এসে দেখে যেও৷”

এরপর আর বিশেষ কথা হত না ওদের মধ্যে ৷ কদাচিৎ এক আধটা মেসেজ করে অনি বাবার খবর নিত অপুর থেকে ৷ অপু নিজে থেকে অনিকে আর যোগাযোগ করত না ৷ অজয়বাবু নিজের ব্যাঙ্ক একাউন্ট গুলিতে অপুকে জয়েন্ট অপারেটর করে দিয়েছিলেন ৷ তাই অনির পাঠানো অর্থের ভরসায় থাকার প্রয়োজন অপুর ছিল না ৷ এভাবেই বছর পেরিয়ে গেল ৷ পূজোটা একাই কাটাল অপুর |

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনির ঘোরা, বেড়ানো, পার্টি করার ছবি ও প্রায়ই দেখত ৷ ভাবত, “যাক ভালই আছে” ৷ গত কয়েকমাস অনির সাথে এক ফ্রেমে একটা মেয়েকে প্রায়ই দেখা যায় ৷ এইতো সেদিন রাতে শুতে যাবার সময় ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে দেখল স্কটল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে ছবি তুলেছে অনি, মেয়েটা অনির গালে গাল ঠেকিয়ে রেখেছে ৷ মুক্তোর মতো দুজনের হাসি ৷ ছবিটা দেখে অপুর বুকে ঝড় উঠেছিল ৷ ফোন বন্ধ করে বালিশে মুখগুঁজে নিজেকে শান্ত করেছিল ৷

এর ঠিক দুইদিন বাদে অপুর ফোনে হঠাতই একটা অচেনা নাম্বারে ফোন এল ৷ ইংলন্ডের নাম্বার ৷ ফোনটা ধরতেই ওপারে একজন মহিলা বলে উঠল,

“ অপু বলছিস ?”

“ হ্যাঁ ৷ কে বলছেন ?”

“ আমি সুর, সুরমিতা ৷ তোর কলেজের বেস্ট ফ্রেন্ড৷ চিনতে পারছিস?”

“ ওমা, সুর! কতদিন পর ৷ কেমন আছিস? তুই কি ইংলন্ডে এখন ?”

দুজনে মিলে অনেক পুরোনো স্মৃতি রোমন্থনের পর সুর জানতে চাইল, অনির্বাণ ওর স্বামী কিনা ৷ অপু ‘হ্যাঁ’ বলার পর সুর জানাল যে ওর স্বামী আর অনি একই প্রজেক্ট টিমে এখন কাজ করে ৷ অফিস পার্টিতে অনি ও সুরমিতার আলাপ হয়েছিল ৷ কথায় কথায় সুরমিতা জানতে পারে, অনির স্ত্রী আর কেউ না, স্বয়ং অপু ! কলেজ জীবনে সেভ করে রাখা নাম্বারেই অপুকে ধরার চেষ্টা করে ৷ ভাবতেই পারে নি অপুকে পাবে সেই পুরোনো নাম্বারে ৷ সুর জানতে চাইল, অপু অনির সাথে কেন বিলেতে যায় নি ৷ বাড়ীর পরিস্থিতির কথা সব জানাল অপু ৷ তারপর সুর অনেক অস্বস্তিতে আমতা আমতা করে বলল, “ কিছু মনে করিস না অপু ৷ আসলে তোর মনে হয় এখানে চলে আসাটাই ভালো হবে ৷”

“কেন?”

“ তুই কি সোস্যাল মিডিয়ায় অনির্বাণের রিসেন্ট ছবিগুলো দেখিস নি?”

অপু চুপ করে থাকে ৷ সুর বলে চলে, “ দামিনী বলে একটা মেয়ে অনির সাথে খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছে ৷ পাঞ্জাবী ৷ দিল্লী বেসড | অনির সাবর্ডিনেট ৷ হাজবেন্ডের থেকে শুনলাম, অনিকে কব্জা করে অফিসে অনেক আনডিউ এডভান্টেজ নিচ্ছে ৷ প্রোজেক্ট টিমে এই নিয়ে অনির এগেনস্টে চাপা ক্ষোভ তৈরী হচ্ছে ৷ ওর হাজব্যান্ড অন্য একটা প্রোজেক্টে আমেরিকা থাকে ৷ বাজারে খবর, দামিনী নাকি অনিকে বলেছে, অনি ছাড়া ও কাউকে ভাবতে পারছে না ৷ ওর স্বামীকে নিয়ে ও চূড়ান্ত আনস্যাটিসফায়েড৷ ও নাকি ওর স্বামীকে ডাইভোর্স দিয়ে মুক্তি চায় ৷ অনিকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে ৷ মেয়েটা এরকম আগেও নাকি করেছে একাধিক ছেলের সাথে ৷ কিন্তু অনি পুরোপুরি একটা ট্র্যান্সের মধ্যে আছে ৷ ওকে কে কি বোঝাবে? বন্ধু হিসাবে তোকে কথা গুলো জানানো আমার কর্তব্য, তাই বললাম ৷”

চুপ করে সব শুনল অপু ৷ নিঃশব্দে দুঃখ গিলে নেওয়া তার অভ্যেস আছে ৷ তাও একবার চাইল অনির থেকে সবকিছু জানতে ৷ ছেলেটা অন্ততঃ সৎভাবে সব স্বীকার করুক। মনে মনে হাসিও পেল ৷ যে ছেলে এই বছর দেড়েক আগেও ওর কাছে এত গুটিয়ে রাখত নিজেকে, সেই কিনা আজ একটা বিবাহিতা মেয়ের প্রেমে পড়ে টক অব দ্য টাউন!

অনি জানাল, সে দামিনীকে বিয়ে করতে চলেছে ৷ অপুকে কিভাবে বলবে সে বুঝতে পারছিল না ৷ ভালোই হল যে অপু নিজেই সব জেনেছে ৷ পুজোর আগেই একমাসের ছুটিতে ও দেশে ফিরছে ৷ ভিসা এক্সটেনশনের জন্য দেশে আসতে হচ্ছে ৷ দামিনীও ওর সাথে কলকাতা আসছে ৷ দামিনী প্রোমোশন পেয়ে একটা নতুন প্রজেক্টের লীড হয়ে জয়েন করবে কয়েক মাসের মধ্যে ৷ তার আগে অনির সাথে ছুটি কাটাবে কলকাতার পুজোয় ৷ ওরা হোটেলেই উঠবে ৷ অপুকে ডিস্টার্ব করবে না ৷ একবার দামিনীকে দেখিয়ে নিয়ে যাবে বাবাকে ৷ অনি চায় অপুর সাথে সেপারেশনটাও ওই সময়েই সেরে ফেলতে ৷ তবে অপু যাতে ওই বাড়িতেই থাকতে পারে, সেই ভাবেই কাগজপত্র তৈরী হবে ৷ বলল, “ দেয়ার ইজ নো পয়েন্ট ইন ড্র্যাগিং দিস অপু ৷ ইউ আর ফ্রি টু লিভ ইওর লাইফ ইন ইওর ওয়ে ৷ জাস্ট লেট মি বি ফ্রি এ্যাস ওয়েল ৷” ও যে আসছে তার প্রমাণ হিসেবে প্লেনের টিকিটের কপিও পাঠিয়ে দিল ৷

অনির ওপর ইতিপূর্বে অপুর মনে যে বিরক্তি জন্মেছিল, সেটা একটা তীব্র উপেক্ষায় পর্যবসিত হল ৷

:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

এখন প্রায় মধ্যরাত্রি ৷ অমবস্যার কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে ছাদে বসে গুমরে গুমরে কেঁদে নিজের কষ্ট গুলোকে জোর করে গলাটিপে যেন মারতে চাইছে অপু ৷ পারছে না ৷ কিছুতেই পারছে না ৷ 

গতকাল রাত থেকে অজয়বাবু চোখ খুলছেন না ৷ রায় কাকু বলে গেছেন, রুগী কোমায় আচ্ছন্ন ৷ হয়তো আর কয়েক ঘন্টা, বা কয়েকদিন ৷ নিশ্চিত বলা যায় না ৷ হয়তো চোখ খুলতেও পারে ! তবে একদম শেষের প্রহর আসন্ন৷ 

কাল সকালে অনির ল্যান্ড করার কথা কলকাতায় ৷ অনি যে টিকিট পাঠিয়েছিল তাতে সেরকমই শিডিউল আছে ৷ ইশ, আর কয়েকটা ঘন্টা কি বাবা সময় দেবেন না তাকে ? এতদিন মানুষটা রইল৷ অনি একবার অন্ততঃ দেখে যাক৷ অনিকে যতই উপেক্ষা করুক, সে আসবে শুনে তাকে এতদিন পর দেখবার জন্য একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা অপুর অবচেতন মনে নাড়া দিচ্ছিল ৷ আসলে, শ্মশানে মৃত মানুষকে দাহ করার আগে তার খাট থেকে রজনীগন্ধার সজ্জা ছিঁড়েখুড়ে পরম অবজ্ঞায় ছুঁড়ে ফেলে দিলেও ফুলের সৌরভ তো চলে যায় না একেবারে !

আজকাল প্লেনের ওঠা নামা , গতিপথ সবই সরাসরি ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানা যায় ৷ অপু উত্তেজনায় মাঝে মাঝেই দেখছিল অনিদের প্লেন কোথায় আছে ৷ দেখছিল ধীরে ধীরে ইউরোপের পশ্চিম সীমান্ত থেকে পূর্বে এগিয়ে আসছে অনি ৷ ঘন্টা খানেক আগে অজয়বাবুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল অপু ৷ আজ অমলামাসীও অজয় বাবুর পাশে বসে বসে ঢুলছে ৷ বাড়ী যায় নি ৷ অভ্যাসমত ফ্লাইটের স্ট্যাটাস চেক করতে গিয়ে আঁতকে উঠল অপু ৷ ক্র্যাশ এলার্ট! দ্রুত ঘরে গিয়ে টিভি চালাল ৷ ঘটনা সত্যি ! নিউজ চ্যানেলে দেখাচ্ছে ব্রেকিং খবর | তুরস্কের সীমান্তে প্লেনটি ভেঙে পড়েছে ৷ যাত্রীরা কেউই হয়তো আর বেঁচে নেই ৷

নিথর হয়ে গেছিল অপু ৷ সব তো শেষ হবারই ছিল ৷ কিন্তু, তাই বলে এইভাবে ! হাজার হোক , ওতো এখনও অনির স্ত্রী ৷ একবার চোখের দেখা দেখতে চেয়েছিল ৷ খুব বেশীতো কিছু চায় নি ! ওতো একাই ছিল, একাই চলত বাকী জীবন ৷ কিন্তু, এইভাবে বৈধব্যের বিচ্ছেদ তো সে চায়নি ৷ অনিকে স্বেচ্ছায় স্বাধীন করে দিতে চেয়েছিল ৷

কালো আকাশের কোলে তারাগুলো তার দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে যেন ৷ যদি সত্যিই ওই তারাদের মধ্যে ওর বাবা মা থাকত! আজ বড় মনে হচ্ছে ওদের কথা ৷ বড় অসহায় ও আজ ৷ একটা কোল চাই, একটা আশ্রয় চাই ৷ আর পারছে না ৷ জীবন ওর প্রতি আরেকটু কম নিষ্ঠুর কি হতে পারত না ? 

কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ছাদের পাঁচিলে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল অপু ! হঠাত ওর ফোনটা বেজে উঠল ৷ ধড়ফড় করে জেগে উঠল অপু ৷ পূর্ব দিগন্তে তখন সূর্যের আভা ফুটেছে ৷ এখন কে ফোন করল? ফোনটা তুলে বুকের মধ্যে ধড়াস করে উঠল ৷ অনির নাম্বার ! হয়তো রেসকিউ টিমের কেউ ফোন করেছে ওর ফোন থেকে – মৃত্যু সংবাদ দেবার জন্য ৷ ফোনটা রিসিভ করে কান্না চেপে “ হ্যালো” বলল অপু ৷

“ অপু, ঘুমোচ্ছিলে ?”

গলাটা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গেল অপু ৷ সাড়া না পেয়ে ওপার থেকে বলল, “ অপু, আমি অনি ৷ কথা বলবে না?”

অনি! হ্যাঁ এতো অনিরই গলা ৷ কিন্তু এত্তো নরম!

হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল অপু ৷ একি স্বপ্ন! নাকি জীবন তাকে নিয়ে আবার কোন নিষ্ঠুর রসিকতায় মাতছে ৷

“ কাঁদছ কেন অপু? ইস এভরিথিং ওকে?”

“ অনি তুমি কোথায়? কেমন আছ ? তোমার প্লেন তো ক্র্যাশ করেছে ৷ তুমি ঠিক আছ তো ?” কান্না ভেজা গলায় সুতীব্র কৌতূহলে জিজ্ঞাসা করল অপু ৷

“ আই ডিড নট বোর্ড দ্যাট ফ্লাইট ৷”

“ মানে? এই ফ্লাইটের টিকেট তো তুমি আমায় দিয়েছিলে!”

“ হ্যাঁ ৷ হয়তো ওটাতেই উঠতাম যদি …”

“ যদি? কি হয়েছে অনি?”

“সব বলব ৷ কিন্তু তার আগে বল , তুমি আমায় ক্ষমা করতে পারবে?”

“ এসব কি বলছ ? আর দামিনীর কি হল ? ওকি ওই ফ্লাইটে …”

“ ডোন্ট আটার দ্য নেম অব দ্যাট বিচ !” যেন আর্তনাদ করে উঠল অনি ৷

“ অনি তুমি ঠিক আছো?” আশঙ্কায় বলল অপু ৷

“ অপু ও আমায় ঠকিয়েছে ৷ ও আমাকে ব্যবহার করেছে ৷ উফ আমি কি বোকা | আই অ্যাম সাচ এ স্টুপিড ! ড্যাম ! ড্যাম !” অনি পাগলের মতো করতে লাগল ৷ অপুর ইচ্ছে করছিল ছুটে গিয়ে একবার অনিকে জড়িয়ে ধরে ৷ অপু কিছু বলতে যাবার আগেই অনি বলতে লাগল, “ আমি ওর জন্য এয়ারপোর্টে ওয়েট করছিলাম ৷ কিন্তু ও আর এলো না ৷ ওর ল্যান্ডলেডিকে ফোন করে জানলাম সকালের ফ্লাইটেই ও নাকি ইউ এস চলে গেছে ৷ উফ ৷ জানো অপু আমার ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে ৷ কিন্তু, তোমাকে একবার বড় দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই …” 

অনি আর কথা শেষ করতে পারল না ৷ বাচ্চার মত হাউ হাউ করে কেঁদে চলল ৷ অপুর মনে হচ্ছিল গালে লেগে থাকা মুঠোফন দিয়েই ও যেন অনির ভেজা গালটা ছুঁয়ে আছে ৷

এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে ছাদে উঠে এল অমলা মাসী ৷ 

“ ওহ্ ! বৌমনি তুমি একেনে? শিগ্গির এস ৷ দাদাবাবু চোখ চেয়েছে ! কেমন যেন হাঁকু পাকু করছে ৷ বোধ হয় তোমায় খুঁজছে ৷”

অপু ফোন থেকে গাল সরিয়ে চোখের ইশারায় অমলামাসীকে জানাল, সে এক্ষুনি নীচে আসছে। অমলামাসী দ্রুতপদে বেরিয়ে গেলে আবার ফোনে গাল পাতল ৷ নরম গলায় বলল, “ প্লিজ কেঁদোনা অনি ৷ প্লিজ ফিরে এসো!”

_________________________________

Facebook Comments