ঋত্বিকা
![](https://i0.wp.com/95canvas.com/wp-content/uploads/2023/10/pujobarshiki.jpg?resize=1024%2C671&ssl=1)
ফেলে আসা পুজোর দিন:- ছোটোবেলার পুজো ভাবতে গেলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফেলে আসা দিনগুলো।কেমন ফ্ল্যাশব্যাক মোডে স্লাইড শো চলতে থাকে। আমার ছোটোবেলা কেটেছে হাওড়ার গ্রামে।তখন কোনো থিমপুজোর বালাই ছিলো না। বাঁশের ম্যারাপ বেঁধে প্যান্ডেল আর সাবেকি একচালার ঠাকুর।তাতেই কি আনন্দ! সে আনন্দ নিখাদ।রোজ দুপুরে বা বিকেল হলেই বন্ধুদের সাথে গিয়ে দেখে আসতাম প্যান্ডেলের কাজ কতদূর এগোলো।তারপর চলতো পুজোর জামাকাপড় কেনা নিয়ে গল্প, কার কটা হলো।এতোটাই হাঁদা ছিলাম যে প্রাণে ধরে নতুন জুতোটাও পরতাম না।ফলে পুজোর কদিন ওই জুতো পরে হাঁটলে ফোস্কা সুনিশ্চিত।তবুও ওই বোকামিগুলোর মধ্যে অদ্ভুত একটা সরলতা ছিলো।তাই আজ ও সেসব ঘটনা মন জুড়ে আছে। পুজোর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পুজোসংখ্যা পড়ার স্মৃতি।কী আকুলতা নিয়ে অপেক্ষা করে থাকতাম কখন সে বই হাতে পাবো ! অপেক্ষাও যে কতো মধুর হতে পারে তা বইটা হাতে পেলে বুঝতাম। শারদীয়া শুকতারা,আনন্দমেলা এসব কাছছাড়া করতাম না। দুপুরবেলা উপুড় হয়ে শুয়ে শুয়ে সেসব বই গোগ্রাসে শেষ করতাম। মোটামুটি বিশ্বকর্মা পুজোর থেকেই পড়াশোনার সাথে সম্পর্ক আলগা হয়ে যেতো।বিকেল হলে বন্ধুদের সাথে পরিকল্পনা – কবে কখন ঠাকুর দেখতে যাওয়া হবে।আমরা তখন হেঁটে হেঁটেই এপাড়া ওপাড়া ঘুরে ঠাকুর দেখতে যেতাম। একবার ঠিক হলো দুই বন্ধু মিলে ঠাকুর দেখতে যাবো আর সঙ্গে থাকবে একটু বড়ো একজন দিদি। কি উত্তেজনা ! মা-বাবা ছাড়া বেরোবো ! মা ও ছেড়েছিল কারণ তখন অভিভাবকরা অযথা আশঙ্কায় ভুগতো না।দিনকাল ও ভালো ছিলো। তো সন্ধ্যে হতে না হতেই সপ্তমীতে বেরিয়ে পড়লাম,আমি, আমার প্রিয় বন্ধু আর সেই দিদি। নতুন জুতো পায়ে লাগলেও হাঁটার ক্লান্তি নেই।সেই প্রথম আমি কানে ইমিটেশনের দুল পরেছিলাম।কানে ব্যথা হবে ভেবে মা আগাম বোরোলীন লাগিয়ে দিয়েছিল।ন’বছরের বালিকার কাছে এ সবকিছুই খুব রোমাঞ্চের বিষয়।রাস্তায় লাল সবুজ টুনি দেখতে দেখতে গোটা চার পাঁচেক ঠাকুর দেখা হয়ে গেল।বাড়ি থেকে নির্দেশ ছিলো দু’ঘন্টার মধ্যে ফেরৎ আসতে হবে।ফেরার সময় তো কাহিল দশা ! পরের দিন সকালে আবার অঞ্জলি দেওয়ার ব্যাপার।খানিক ঘুগনী আর ঝাল ঝাল ফুচকা খেয়ে হুস্ হাস্ করতে করতে পায়ে ইয়া বড়ো বড়ো ফোস্কা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম,আর মনে ছিলো একরাশ সুখ।পুজোর সেই আনন্দমাখা দিনগুলো যে কোথায় হারিয়ে গেলো?
নাহ্ বড়ো হওয়ার কোনো আনন্দ নেই !!
Facebook Comments