মহুয়া ঘোষ
ধু ধু বরফ দেখেছ, যেখানে প্রানের চিহ্ন নেই, তবুও বসন্ত আসে, বরফ গলে কচি ঘাস মাথা চাড়া দেয়। বসন্ত বাতাসে তিরতির করে দোলে তার শিষ, সহসা কেঁপে ওঠে তার বুক। বারুদের ধোঁয়া আর বিষাক্ত বাতাসের কটু গন্ধে তার বুকে তখন তীব্র জ্বালা, ভারি বুটের আঘাত থেকে কি করে বাঁচবে তার বেঁচে থাকার আশা? নিরাশার গহ্বরে আবার লুকায় তার মাথা। বাইরে তখন গুলির বৃষ্টি সঙ্গী মেশিনগান, বোমারু বিমানের গগণবিদারী সুতীব্র সাইরেন, জীবনের জন্য হাহাকার সর্বত্র। তবুও ফাটলের ফাঁক দিয়ে ঘাসের শিষ উঁকি দেয়, দেখে আজও আকাশ রঙিন করে সন্ধ্যা নামে, কিন্তু বসন্ত হারিয়েছে কালো ধোঁয়ার আড়ালে। সামনে তার আকাশ ছোঁয়া ইমারত, ভেসে আসত আনন্দ হাসি হুল্লোড়, ভালো বাসার ছোট ছোট স্বপ্ন, হয়ত বা এখানে ওখানে কচি হাতের চিত্র বিচিত্র স্পর্শ ; সবই ধুলায় ধুসরিত, সুখের নীড় ভেঙে চুরমার, ভবিষ্যতের স্বপ্ন পদদলিত। কদিন আগেও বসন্ত বাতাসে তার নরম শিষের ডগা দুলত, আজ বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় নিষ্প্রাণ, নিস্পৃহ। মাথার উপর আজ আর পাখী গান গায় না, বোমারু বিমানের সুতীক্ষ্ণ শব্দে কচি ঘাসও আর মাথা দোলায় না । আগ্রাসনের দম্ভ নিস্তেজ করেছে সূর্যের অহংকার বিস্ফোরণের কালো ধোঁয়া গ্রাস করছে চরাচর। উষ্ণ শোনিতের আলপনা শুভ্র তুষারে, ওরা প্রাণ দিয়ে লড়ে দেশটাকে ভালবেসে। আগ্রাসনের করাল থাবা বাধা মানে না কোনকিছুই, মানবতা তার কাছে তুচ্ছ, খোলামকুচি! দেখে কথার খেলাপ আর স্বার্থের উস্কানি সারা দুনিয়ায়, ক্ষুদ্র তৃণ লুকায় তার শিষ লজ্জায় ফাটলের এক কোণায়।
Facebook Comments