Site Overlay

সোয়াস্তির অসোয়াস্তি

দেবযানী ভট্টাচার্য

(রানিং ট্রেনের আওয়াজ। কিচিরমিচির হাজারো পশুপাখির ডাকাডাকি।) 

হারানিধি (একটি খচ্চর) : পেন্নাম হই গুণীজনেরা। আমি একটি খচ্চর। ধরে নিন এই অধমের নাম হারানিধি লাখোটিয়া। প্যাসেঞ্জার মোটরম্যান। 

ট্রেন ঢোকাচ্ছি। সোয়াস্তিনগর জঙ্গলধাম স্টেশনে। অধমের আস্তানাও সেখানে। ধরে নিন। আরে ধরে নিন বলাতে অতো ভুরু কুঁচকে দেখার কী হলো মশায়? সারা জগতেই তো এ ওকে আর সে তাকে ধরাধরিতেই বেঁচেবর্তে আছে। সূর্য গ্যালাক্সিকে ধরে, পৃথিবী সূর্যকে ধরে, চাঁদ পৃথিবীকে ধরে, পৃথিবীর আমজনতা বিবিধ স্বঘোষিত প্যাঁয়দাকে {ল্যাডারকে(ক্যাডারকে)} ধরে, স্বঘোষিত প্যাঁয়দারা {ল্যাডাররা(ক্যাডাররা)} ছটকু বড়কু হোমরাকে {লীডারকে(নেতাকে)} ধরে, ছটকু বড়কু হোমরারা {লীডাররা(নেতারা)} লাগসই চোমরাকে {কামলাকে(আমলাকে)} ধরে, লাগসই চোমরারা {কামলারা(আমলারা)} কুৃচো যন্ত্রীকে {সান্ত্রীকে(মন্ত্রীকে)} ধরে, কুচো যন্ত্রীরা {সান্ত্রীরা(মন্ত্রী)} ধেড়ে যন্ত্রীকে {সান্ত্রীকে(মন্ত্রীকে)} ধরে… নেভার এন্ডিং ফেনোমেনন বুইলেন কি না, তা হে হে হে লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট এই  আমিও ঠিকঠাক ধরে আছি ট্রেনের স্টিয়ারিং(?) নইলে এতোক্ষণে খচ্চরাণি বউয়ের কাছে নিরম্বু একাদশীর ফরমান পৌঁছে যেতো। 

এতোসমস্ত ধরাধরির বিশ্বজোড়া নেটওয়ার্কে আপনার কী এমন ফোসকা শুনি এট্টু ধরে নিতে? ধরে নিন মশায়। আপনাদের জগতে টোটো থেকে সুপারসনিক থাকতে পারে আর আমাদের জগতে এট্টা ট্রেন আছে এটা ধরতেই ব্যাজারমুখো হলে চলে? ধরুন ধরুন। আখেরে লাভ আপনারই। 

নাহ্, খেজুরে সরিয়ে গাড়িটা ঢোকাই আগে। আরে কী ব্যাপার? অতো চেল্লামিল্লি কিসের? লোকজন হুড়মুড়িয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে কেন? এতো লোক তো এই কাক ভোরে থাকেনা। কী হলো টা কী!

(ট্রেন শম্বুক গতিতে প্ল্যাটফর্ম এ এলো। দাঁড়ালো। দক্ষযজ্ঞ শুরু হলো।) 

ষণ্ড সিং (একটি ষাঁড়) :  এই এই ঝুনো কাঠুয়া গুঁতোচ্ছিস কেন! আমিও তো উঠবো ট্রেনে। 

ঝুনো কাঠুয়া (একটি কচ্ছপ) :  আরে ভাগ ষণ্ড সিং, আমি তো আগে চড়ি! জানিসনা ধম্মে বলে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা! 

গবাদি দত্ত (একটি জার্সি গরু) :  বলি ও বাবারা এই গবাদি দত্তরে এট্টু জায়গা দাও দিনি, শেষ বয়সে অপঘাতে মরতি পারবোনানে। নরকবাসে বড়ো ভয়। আমিও গাড়িতি উঠবো।

ভোলা ভল্লি (একটি ভাল্লুক) :  ওই ওই টেরেন এয়েলো! দত্ত দা, এই ভোলা ভল্লিও আসতেছে তোমার পরেই। এ তল্লাটে ভোলা আর নেই অলমাইটি! উটি পরো উটি পরো সব্বাই রে নে। ও কচির আম্মি। 

(ঘোষক (একটি গাধা) আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন বোঝাতে এই ট্রেনের যাত্রা এখানেই শেষ। এটি কার শেডে যাবে। কেউ এই ট্রেনে উঠবেন না কিন্তু কে শোনে কার কথা! প্রবল চেল্লাচিল্লি চলছে। আমাদের মোটর ম্যান/ লোকোপাইলট খচ্চরটি ধাক্কাধাক্কির মাঝেই নামার চেষ্টায় কনুইয়ের গুঁতো খেলেন এক লেবু লজেন্স হকারের (একটি গিনিপিগ)। ) 

হারানিধি : আরে করো কী! বেমক্কা গুঁতোবার কারণটা কি হে? আর এতো লোকের ঠেলাঠেলিই বা লেগেছে কিসের জন্য? এই তুমি বেচারাম গিনিমাল না? খরগুশে পাড়ায় ঘর না তোমার? 

বেচারাম : হ্যাঁ। আমিই ব্যাঁচা। স্যরি হারু দা। খুব স্যরি। ঘাড়ের উপর পড়ছে যেভাবে এরা, সামলাতে পারিনি। অ্যাঁ! কি বললেন? এতো ভীড় কেন? আপনি জানেন না? ওহ্ আপনি জানবেন কি করে, সবে তো এলেন। ঢুপুস এসেছে হারু দা ঢুপুস। গাঁ গেরামে আতঙ্কে যতো জানোয়ার ভিটেবাড়ী ছেড়ে দিশেহারা ছুটছে মাসি পিসি শ্বশুরঘর। 

হারানিধি : ঢুপুস???? সেটা কি বস্তু?

বেচারাম : এটা কোনও কোশ্চেন হলো দাদা? আমি কেন এ দিগরের কেউই জানে না সেটা কি বস্তু। কেবলমাত্র শুনেছে তার আওয়াজ। …চললাম স্যার। ডাউনের গাড়ি ধরতে হবে। এতো লোক উঠবে। হ্যালদা জংশন অবধি গেলেও আজ বেওসা দুরস্ত, বুইলেন কিনা? আসি।

হারানিধি : এই দাঁড়া দাঁড়া ব্যাঁচা আজ আর যাসনে বুঝলি, আমার সাথে গাঁয়ে চ’। তোর বৌদি খোকাটাকে নিয়ে একলা রয়েছে। যা ভীতু মানুষ বেরোনোর কলজের জোর তো নেই, দোর দিয়ে দাঁতকপাটি লেগেছে কিনা ওপরওয়ালা জানেন। চল ভাই, গাঁয়েই যাই। আদতে কি হলো না হলো দেখাটা কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে রে। স্বামীজী বলেছেন …

বেচারাম : রক্ষে করো হারু দা! এরমধ্যে আর সেন্টু দিতে স্বামীজীকে টেনোনা। হজম হবে না। তারচেয়ে বরং চলো। যাচ্ছি তোমার সাথে। 

(প্রচণ্ড আতঙ্কিত জন্তু জনতার হল্লাময় স্টেশান চত্বর ছেড়ে জঙ্গলধামের দিকে এগোতেই উল্টো মুখে হনহনিয়ে আসা বিষ্টু খুড়ো ওরফে বিভীষণ ভণ্ডশালী(একটি হায়েনা) থমকে গেলেন এদের দেখে। এরাও দাঁড়ালো।)

হারানিধি : ও খুড়ো, তুমিও কি চললে নাকি হে? এ তোমরা কী শুরু করেছো বলোতো! তুমিতো গাঁয়েই ছিলে, একটু খুলেখেলে বলো দেখি ঘটেছে টা কী!

ভণ্ডশালী : ঘটেছে কী বলছো হে হারানিধি! বলো কি ভয়ঙ্কর কাণ্ডখানা ঘটে গেছে। গাঁয়ে ঢুপুস এসেছে হে। বীভৎস বিরাট দানো এক! সে কালান্তককে চাক্ষুষ করার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য এখনো কারোর হয়নি বটে কিন্তু তার চলাচলের শব্দই জানান দিচ্ছে জন্তুটি কতোখানি বিপজ্জনক! আর সকলের মতো তুমিও বিবিবাচ্চা নিয়ে পিঠটান দাও হে হারানিধি। 

হারানিধি : আর তুমি? তোমার জানমালের ভয় নেই? তুমি যাবেনা?

ভণ্ডশালী : অ্যাঁ, হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো তো, নিশ্চয়ই যাবো। তা– তা– তাইই তো দেখতে এসেছি ট্রেনে ভীড় কেমন হছে। গেঁটেবাতের গিন্নি নিয়ে চলা কিনা। আসি হে, আসি এইবার।

(কিরকম যেন থতমত খেয়ে তেড়ে শশব্যস্ত হয়ে ভন্ডশালী রওনা দিলো সামনের দিকে। )

বেচারাম : হারু দা, এই বিষ্টু খুড়োর ভাবসাব কেমন কেমন লাগলো না গো? সব্বাই প্রাণ হাতে ছুটছে, ঠেলে গুঁতিয়ে ট্রেনে চাপতে পারলে বাঁচে আর এ দেখি এখন কেবল সুরতহাল জানতে এসেছে। পালানোর জোগাড় নাকি পরে হবে! এটা বাজছে না খিঁচ খিঁচ?

হারানিধি : কথা মন্দ বলিসনি ব্যাঁচা। পা চালা। আগে গিয়ে আমরাও দেখি সরজমিনে তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। 

(আকাশে আক্ষরিক অর্থে চিল চীৎকার, মাটিতে ভাব অর্থে সম্মিলিত চিলচীৎকার বাকি জানোয়ারদের।  কয়েক গজ এগোতেই দেখা মিলছে ত্রস্ত ভয়ার্ত মুখের নানা আড়শি পড়শির। জায়গায় জায়গায় গুঞ্জন জটলা। একটু বেশি চেনা মুখের জনাকয়েক দেখে সেদিকেই এগিয়ে গেলো দুইজন। ওরাও এদের দেখেই আঁকুপাঁকু করে এলো।) 

শম্বর সেন (একটি হরিণ) : আরে হারু দা, এই ফিরলে ট্রেন নিয়ে? শুনেছো তো কাণ্ডকারখানা? কলজে খানা তুড়ুক নাচছে মাইরি! সত্যিই ভেবলে গেছি। 

হারানিধি : আরে এই তো সেনেদের বাড়ির শম্বর। ঠিকমতো শুনতে আর পারলাম কই রে শবরা! সব্বাই তো আধাখ্যাচড়া বলেই পগার পেরোচ্ছে। তুই সবটা জানিস যদি, তুইই বল।

শম্বর সেন : শোনো তবে। ভেটকি সিঙ্গির বাড়ির খিড়কিদোরে একখানা এঁদো ডোবা আছে দেখেছো নিশ্চয়ই? 

হারানিধি : হ্যাঁ। দেখেছি মানে! কত্তবার ছাওয়ালদের হেলথ ড্রিংকস বানাতে কর্তা গিন্নি মিলে কচি ঘাস তুলে এনেছি ওই পুকুর পাড় থেকেই।

শম্বর সেন : তো কিস্যাখানা ওই ডোবাতেই জন্মেছে। আজ ভোর রাতে সিঙ্গিবাড়ীর এক ছোঁড়া বাহ্যে গিয়েছিল ওই দিকেই। তার কাজকর্ম সেরে ফিরতি মুখে শোনে সেই হাড় হিম করা আওয়াজ!

হারানিধি : কী!!!

ম্যাড়ানাথ মিত্র (একটি ভেড়া) : হ্যাঁ গো হারু কাকু, আমি ম্যাড়া মিত্তির, বাপের দিব্যি দিয়ে বলছি গো, ও ঠিকই বলছে। ওই পুকুরেই আওয়াজ উঠেছে ঢুপুস!!!! একবার নয় দুই বার নয়, বার বার তিন বার।

হারানিধি : তাতে কি হলো ম্যাড়া মিত্তির এতো হইহল্লার?

শম্বর সেন : কি বলছো কি তুমি! ভেটকি সিঙ্গির ডোবায় শুরু হয়ে এখন সে গাঁয়ের আরোও নাহক পাঁচ পুকুরে অমন আওয়াজ তুলেছে। গাঁয়ের মাতব্বরেরা সব শুনেটুনে সিদ্ধান্তে এসেছেন এ নির্ঘাৎ কোনও আজীব ভয়ঙ্কর প্রাণী।

বেচারাম : মানুষের থেকেও ভয়ঙ্কর?

শম্বর সেন : সেটা জানিনা। তা বোধহয় নয়। তাহলে এতোক্ষনে বিলকুল সাফ হয়ে যেতাম আমরা। 

ম্যাড়ানাথ মিত্র : কিন্তু এটাও তো হতে পারে যে দিনমানে সে প্রাণী ঘুমোয়। ওই ডোবার তলায়। ঝুপ করে সন্ধ্যে নামতেই সে হুপ করে চড়ে বসবে আমাদের ঘাড়ে আর ফিনিশ! আমি বাবা বিকেলের আগেই পালাবো স্টেশন মুখো…আরে আরে ওরা ফিরছে কেন সক্কলে? তবে কি গাড়ি যাচ্ছেনা কোনোদিকে? কি সব্বোনাশ! 

শম্বর সেন : গাড়ি বন্ধ! তারমানে আমাদের এখানেই পড়ে পড়ে বেঘোরে মরতে হবে ওই ভয়াল জীবের হাতে! না! 

হারানিধি : আরে দাঁড়া দাঁড়া। লড়াইয়ের আগেই ময়দান থুড়ি জঙ্গল ছেড়ে ভাগবো নাকি! দেখাই যাক না কি সে ভয়াবহ জন্তু। ওই তো বাকি সক্কলে ফিরেছে যখন সব্বাইকে জড়ো কর তো এক জায়গায়। ওই খুলিপোতার মাঠেই ডাক সকলকে। মিটিং দরকার। কে জন্তু কি জন্তু না দেখেই আতঙ্কে দিশেহারা সব। 

বাকিরা : হ্যাঁ  হ্যাঁ। এটা ভালো প্রস্তাব। এর ওর থেকে শুনেই বোঁচকা বুঁচকি নিয়ে দেশান্তরী হওয়া কোনও ঠিক কথা নয়। হোক মিটিং।
(মাইকে ঘোষণা চলছে। আমাদের সোয়াস্তিনগরের সমস্ত জানোয়ারদের জানানো যাইতেছে বর্তমান বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতির হালহকিকত পর্যালোচনা করতে একটি মিটিং কল করা হয়েছে। বহু জানোয়ার ইতিমধ্যেই উপস্থিত হয়েছেন। যারা ঘরে দোর দিয়ে আছেন, এখানে অ্যাবসেন্ট, অতি সত্বর দলে দলে খুলিপোতার মাঠে হাজিরা দিন। এ বিপদ আমার আপনার সবাকার।…দলে দলে জন্তুরা আসছে। হট্টগোলে টেকাদায়) 

(ভেটকি সিঙ্গির গুপ্ত শত্রুর আবাসস্থল)

ব্যাঘ্রলাঞ্ছন ব্যগ্র (একটি বাঘ) : ঘোষণা কানে ঘুঁষছে ভণ্ডশালী? এতো আতঙ্কেও এই বাওয়ালি! কোথা থেকে জোটালে এ সাহস তারা? কে আছে এর পিছনে …অ্যাই অ্যাই ওখানে কে রে, দাঁড়া, দাঁড়া বলছি দাঁড়া। 

শিবারাম মুখুটি (একটি শেয়াল) : আজ্ঞে আমি টুলো পণ্ডিত জাহাঁপনা! আপনার দাসানুদাস শিবামুখ্যু থুক্কু শিবা মুখুটি। 

ব্যাঘ্রলাঞ্ছন ব্যগ্র : খাবলে নেবো দাঁতকপাটি! বেল্লিক কোথাকার! তেল দিতে দিতে হুঁশ থাকেনা না? আমি কোথাকার জাহাঁপনা? (কাঁদো কাঁদো স্বরে) বলে কিনা এই ভণ্ড শালা থুড়ি শালীর সাথে সড় করে জব্বর ফন্দি আঁটলাম অথর্ব ভেটকি সিঙ্গি উচ্ছেদের, গাঁওবুড়ো হবার আশে,  তাতেও বুঝিবা কয়টি বেড়ে চালাকের বাড়াবাড়ি তে বাড়া ভাতে ছাই পরার উপক্রম, আর ইনি এলেন অয়েলিং করতে। 

ভণ্ডশালী : ইয়ে মানে আমি বলছিলাম কি কত্তামশায়, কাল রাত থেকে দাঁতে কুটোটি কাটেন নি, আপনি এইবেলা করে নিন সামান্য ইটিং ওরা করুক না যতোপারে মিটিং, রাত নামলেই বেরোবে ঢুপুস আর ওদের সাহসপাতি সেইক্ষণে ফুউউউউস্।

শিবারাম :হক কথা বললে বিষ্টু। এতো টেনশনে যদি কত্তা টেঁসে যান … না মানে ওভাবে তাকাবেন না কত্তাহুজুর আপনার ভালোর জন্যই বলছি, যদি এদিক ওদিক কিছু ঘটে যায় তাহলে এতো ঘটনার ঘনঘটা বিফলে যাবে যে! 

ব্যাঘ্রলাঞ্ছন : হুম বুঝলাম। খাওয়া সে হবে অখন। আপাততঃ চলো সবাই। খুলিপোতায় যাই। কি হয় সেখানে জানাটা দরকার। বেশি বেগড়বাই করলে গাঁয়ের পিলে সর্বস্ব জানোয়ারগুলোর খুলি ওখানেই পুঁতে রেখে আসবো। তোমাদের অতো মেনিবিড়াল ভালোমানুষগিরি আমার ধাতে সয়না। চলো চলো।

(খুলিপোতার মাঠ। মিটিং স্থল। গোটা জঙ্গলধাম একত্রিত। গাঁক গাঁক গোঁ গোঁ গাঁই গুঁইয়ে একইসঙ্গে গমগম ও থমথমে আবহাওয়া। সভা শুরু হলো। )

ভেটকি সিঙ্গি : ভাইসব, আমি ভেটকি সিঙ্গি, এ অঞ্চলের গাঁওবুড়ো, আজকের এই ঘোর দুর্দিনে তোমাদের সব্বাইকে এখানে ডেকেছি সবে মিলে শলা করে এ বিপদের হাত থেকে রক্ষার একটা উপায় বের করতে। এই যে হারানিধি, আমাদের গাঁয়ের এক বুদ্ধিমান খচ্চর, ট্রেন চালায়, শহরে যায়, অভিজ্ঞতা অনেকের থেকেই বেশি। অবিশ্যি তোমরা সব্বাই তাকে জানো চেনো, তা সে আমার কাছে গিয়েছিল। সেইই এই মিটিং এর উদ্যোক্তা। তাই তাকেই আমি বলছি তার কি বক্তব্য সেটা সর্বসমক্ষে জানাতে। 

(জানোয়ারগণ চুপ। কেবল ব্যাঘ্রলাঞ্ছনের হিসহিসানি শুনলো শিবারাম। নাহ্, আরোও একজন শুনলো। বেচারাম!)

ব্যাঘ্রলাঞ্ছন : পণ্ডিত, এ ছোকরার বাপ সেই তিলেখচ্চর, নয়? 

শিবারাম : আজ্ঞে হুজুর। সেইই তিলকচন্দ্রেরই পুত্র এই হারু। 

ব্যাঘ্রলাঞ্ছন : আমার প্ল্যানিং ভেস্তে আমায় খচালে ওই খচ্চরের প্রাণপাখি খিঁচে নেবো আমি)

শিবারাম : চুউউউউপ! 

(ভেটকি সিঙ্গি আসনপিঁড়ি হলেন। হারানিধি শুরু করলো।) 

হারানিধি : উপস্থিত জঙ্গলধামবাসী জানোয়ারগণ, নতুন করে বলার কিছুই নেই, সিঙ্গিজ্যাঠা এ সভার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেই দিয়েছেন।কথা হলো,  বিপদ কি সেটা আমরা সব্বাই কমবেশি আন্দাজ করেছি। কিন্তু সব্বাই খোলসা করে জানিনা। তাই এখন আমাদের যেটা করণীয় তা হলো কচিছানা সিঙ্গি কে শুধিয়ে বিষয়টি ভালোভাবে জানা। …অ্যাই শম্বর, ছানা কোথায়?

শম্বর সেন : ছানা, ওই ছানা আরে কোথায় গেল ছানা…আরে ওই তো ছানা! সিঙ্গি জেঠিমার আড়ালে। আয় আয় সোনা বাবু। ভয় কিসের? আমরা সব্বাই তো রয়েছি।

(প্রায় চ্যাংদোলা করে সভার মধ্যস্থলে ছানাকে আনা হলো। )

কচিছানা সিঙ্গি : (ভয়ে কোঁকাতে কোঁকাতে) মা’র কাছে যাবোও…ঢুপুস আসছে ঢুপুস। 

হারানিধি : না খোকা, কিচ্ছু আসছে না। তুই না ভেটকি সিঙ্গির পুতি! তার দাপটে এককালে গরিলা গর্দভ গলাগলি রিলেশন মেইনটেইন করতো আর তুই কী না কী কারণে ভয় পাচ্ছিস! ফুহ্। লড়কে লেঙ্গে এঁদোডোবাস্তান। আগে বাড়! একটু মনে করে করে বলতো বাবা সেদিন ঠিক কি ঘটেছিল? 

কচিছানা সিঙ্গি : (ভরসা পাওয়া গলায়) আচ্ছা, বলছি, বলছি, এট্টু জল খেয়ে নিই।… সে রাত প্রায় শেষের দিকই হবে। আগের দিন চারটে মুরগি খেয়েছিলাম, নির্ঘাৎ ফলিডল ফরমালিনেই চোবানো হবে, সে কি পেট কামড়ানি আর কি পেট কামড়ানি!

ম্যাড়ানাথ মিত্র : অতো গৌরচন্দ্রিকায় কাজ নেই কচি, তুমি সিধে কেসে এসো। (কচি খুকখুক করতেই) এই এই কেশে নয়, কেসে এসো অর্থাৎ কিনা স্ট্রেইট বিষয়ে এসো।

কচিছানা সিঙ্গি : তাইই তো বলছি। তা সেই কামড়ানিতে অস্থির হয়ে গেলাম বড়োবাইরে। কাজ শেষে শৌচ সেরে টেরে ঘাটে উঠছি, দু চারটে পাখি টাখি ডাকতে শুরু করেছে, মিষ্টি হাওয়া দিচ্ছে…

ম্যাড়ানাথ মিত্র : ওই আবার শুরু করলে শিবের গীত, এ ছোঁড়াকে নিয়ে তো আর পারা গেল না। সিধে আসল কথায় আয় না বাপধন!

কচিছানা সিঙ্গি : কি গেরো! তাইই তো বলছি রে বাবা। হ্যাঁ, তারপর তো পেটটায় হাত বুলোতে বুলোতে এগোচ্ছি, হটাৎ ঢুপুস! কি পিলে চমকানো আওয়াজ রে বাবা! জলের দিকে চাইতেই ফিকে আঁধারেই মালুম পেলাম ঘাই দিচ্ছে বেশ! চোখ কচলে তাকাতে যেতেই আবার!

সকলে : তারপর???? 

কচিছানা সিঙ্গি : তারপর আবার!! সাথে কেমন হাড় কাঁপানো গোঁ গোঁ ধ্বনি! মুর্তিমান বিভীষিকা। কাঁইমাঁই করে ছুট লাগালাম ভিতর বাড়ির দিকে। তারপর আর কিচ্ছুটি মনে নেই। চোখ মেলতে দেখি এক উঠোন জানোয়ার, মা লেজ নাড়িয়ে বাতাস করছেন…আমি মার কাছে যাবো…

(কচিছানা সিঙ্গির কান্না আবার শুরু হতেই বাকি ছেলে পিলেও চেঁচামেচিতে ধুয়ো জুড়লো। ভলেন্টিয়াররা সবাইকে শান্ত করার ফাঁকে বেচারাম হারানিধির কানে ফিসফিসিয়ে বললো যা শুনে এসেছিল।)

বেচারাম : ও হারু দা, শোন আগে!

হারানিধি : কি বলবি?

বেচারাম : ………

হারানিধি : সেকিরে! ঠিক শুনেছিস? তবেতো দেখতে হচ্ছে ….

(সভা শান্ত হতেই হারানিধি শুরু করলো বক্তব্যের বাকি অংশ) 

হারানিধি : হ্যাঁ তো উপস্থিত জানোয়ারগণ, আপনারা শুনলেন ছানা সিঙ্গির বয়ান। বাকি আরোও দু চারজন ইতিউতি বলেছেন যে সিঙ্গির পরে তারাও নাকি শুনেছেন গাঁয়ের অন্য কিছু পুকুরেও এমন আওয়াজ, কিন্তু সেসব কেবলমাত্র অনুমানকৃত, চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়েছেন এমন নয়। প্রত্যক্ষদর্শী একমাত্র এই কচি সিঙ্গি। তবু আমরা কারোর কথাই উড়িয়ে দিচ্ছিনা। জানমালের ব্যাপার, ছিটেফোঁটাও গুরুত্ব কম দেওয়া চলবে না।সব শুনে টুনে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে এলাম যে আজ রাতটুকু আমরা এ গাঁয়েই থাকবো। কোনও রকম বিপদের সংকেত যদি পাই, কাল ভোরেই সব্বাই গাঁ ছাড়বো। কেমন?
(জনতার রেসপন্স মোটের উপর ফিফটি পারসেন্ট পজেটিভ বোঝা যাচ্ছে। একজন বলে উঠলো)

ভোলা ভল্লি : হারু ভাই, আমি এট্টা কথা কইতি চাই। কোশ্চেন ডা হলো, বিপদ ঝ্যাখন বুঝতি পারতিছি, ত্যাখন থেইক্যে যাওয়াডা বুদ্ধির কাজ হবেনে কি? 

হারানিধি : ভল্লি ভাই, এবার একটা কথা আমি বলি, সে দানোকে কিন্তু আমরা কেউই চোখে দেখিনি, ছানা ছাড়া সেইভাবে নিজে চোখে ঘটনা দেখা কেউ আছে কি বলো তো? নেই। এই এক আওয়াজের কথাতে ভয় পেতেই পারি, কিন্তু এর কথাতে বাপপিতেমোর এতোদিনের ভিটে ছেড়ে চলে যাবো? কি বলো তোমরা?

বেচারাম : হারুদা ব্যাপারটা এমনই কিন্তু খানিকটা যে “ঘাটে গিয়েছিল জায়ের মা, দেখে এসেছে ঘোগের পা, তুই বললি, মুই শুনলুম, মরি বাঁচি মা ঘোগ দেখলুম”। এতেই কি…

গবাদি দত্ত : না, এতেই সর্বস্ব ফেলে যাওয়াটা আখেরে ভুলই হবে মনে হতিছে।

শম্বর সেন : তাহলে কি করা হবে?

সকলে : থাকি থাকি, একরাত থেকেই দেখি না। 

(সব্বাই বুঝেছে বোঝা যাচ্ছে, এমন সময় ভণ্ডশালী ও শিবারাম একই সাথে কাঁইমাঁই জুড়লো)

ভণ্ডশালী ও শিবারাম : কি বলছো কি তোমরা থেকে যাবে! ভেবে বলো তো! এই যে হারানিধি, খুব যে উসকোচ্ছো,  কাজ টা কি ঠিক হবে? এইবেলাই বেরিয়ে পড়লে হতো না? রাতে যদি তেমন তেমন বিপদ কিছু ঘটে! কৈফিয়ত কে কাকে দেবে তখন?
হারানিধি : কেউ কাউকে দেবেনা। আমরা কারোর উপরেই কিচ্ছু চাপিয়ে দিচ্ছিনা। যার ইচ্ছে চলে যেতেই পারে। বাকি যারা থাকতে চায়, দোর আগল দিয়ে থাকবে ঘরে। ঘরে দোরে আক্রমণ বুঝলে আওয়াজ ছাড়বে। বাকিরা রে রে করে পড়বে। আর বললামই তো, কোনও পুকুরে যদি আজ রাতে অমন ঘটনা আবার ঘটে সব্বাই একসাথেই গা ছাড়বো, এই আপনার গেঁটে বাতের গিন্নি সমেত। কি ভায়েরা, রাজী?

সক্কলে সমস্বরে : রাজী। রাজী। 

(সভা ভাঙ্গলো। ঘরে ফিরছে সবাই। খরখরে চোখে হারানিধি ও তার দলবল কে মাপতে মাপতে ডেরায় ফিরছে ব্যাঘ্রলাঞ্ছন তার সাঙ্গোপাঙ্গো সমেত।)

 …

(সন্ধ্যে গড়াচ্ছে রাতের দিকে। গা শুদ্দু জানোয়ারেরা সব ঘরে আগল দিয়ে বসে। ধুপ ধাপ যেকোনো আওয়াজেই চমকে চমকে উঠছে। আবার বুঝতে পারলে নিজেরাই নিজেদের থিতু করছে, সাহস জোগাচ্ছে। কিন্তু যাইই করুক সবই ঘরের ভিতরে। কেবল খুলিপোতার মাঠের বড়ো পাকুড়গাছের তলায় জড়ো হলো জনাকয়েক ছায়ামুর্তি। তারা নিজেদের মধ্যে কি সব যেন বলছে, পরিস্কার শোনা যাচ্ছে না। খানিক পরেই আবার সব কোথায় যেন চলে গেলো।)

(এখন গভীর রাত। সারাদিনের উত্তেজনার ক্লান্তিতে জেগে থাকার চেষ্টা সত্ত্বেও অনেকেই ঢুলছে। চোখটা মুদে আসছে সিঙ্গি বাড়ির সদস্যদেরও। হটাৎ বুক কাঁপিয়ে আবার সেই ঢুপুস ঢুপুস! সাথে গোঁ গোঁ! আবার আওয়াজ! নির্ঘাৎ জন্তুটা ডেরা ছেড়ে বেরিয়েছে। কাকে খেলো রে বাবা! এইধরনের কথাবার্তা ঘরে ঘরে বুড়বুড়িয়ে উঠলো আর তারপরেই প্রচুর হল্লা লাগলো মহল্লা জুড়ে।… এই ধর ধর! ওই পালাচ্ছে পালাচ্ছে! তবেরে হতভাগা বেল্লিক হনুমান কোথাকার! ওইদিকে কোথায় যাচ্ছিস রাস্কেল! ইত্যাদি ইত্যাদি।… এতে করে, কি সব্বোনাশ হয়ে গেল রে এটাই এই মুহুর্তে গ্রামের জানোয়ারদের প্রতিক্রিয়া। লাফ ঝাঁপ দিয়ে বেরিয়ে এলো সব, দাঁত নোখ শানিয়ে, আজ এসপার নয় ওসপার। ছুটে সিঙ্গিদের পুকুরপাড়ে গোটা গ্রাম।)

ভেটকি সিঙ্গি : আরে কি হলো কি হলো? এতো চীৎকার কেন? …এযে হারানিধি! শম্বরা, ব্যাঁচা, ম্যাড়া এতো ভল্লিও আছে দেখি! তোমরা ও কাদের বেঁধেছো? কপি ওল্লা(একটি হনুমান)! তুই! সদলবলে! ভণ্ডশালী! তুমি!! এসব কি হচ্ছে? 

গোটা গ্রাম হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। হারানিধি গলাটা খাঁকরে নিলো।

হারানিধি : হ্যাঁ সিঙ্গি মশায়। এরাই সেই ভয়াবহ অদ্ভুতুড়ে ঢুপুসের সৃষ্টি কর্তা বলতে পারেন। তবে কিনা ষড়যন্ত্রের মূল হোতা যিনি, তিনি এখানে নেই, অবিশ্যি এক্ষুণি এসে পড়বেন। বেঁধে আনতে লোক চলে গিয়েছে কিনা।…(গোলযোগ বাড়লো অপরাধীদের আসাতে) ওই ওই বলতে বলতেই এসে পড়েছেন শ্রীল শ্রীযুক্ত ব্যাঘ্রলাঞ্ছন ব্যগ্র মশায় চামচা শিবারাম মুখুটি সমেত! নামের কি মাহাত্ম্য খানাই রাখলে হে, বাঘ কুলের লাঞ্ছনার একের নম্বরের উদ্যোক্তা! আবার কি ফোঁসানি দ্যাখেন তেনাদের। কিরে বিল্লি মিঁয়াও, ঝামলা করেনি তো কিছু?

বিল্লি মিঁয়াও (একটি হুলো) : করবার সুযোগ দিলে তো! দশবারোতে মিলে ঝাঁপিয়ে আঁচড়ে কামড়ে কাত করে দিয়েছি না! হা হা হা।

ভোলা ভল্লি : আরে এসব এই ভল্লির ট্রেনিং! এমন প্যাঁচপয়জার শিখিয়েছি অলমাইটির কিরে, ট্যাঁফু করার আগেই দুশমন কব্জায়। 

ভেটকি সিঙ্গি : দ্যাখো, এরা অপরাধী এটা বুঝেছি। বিচারের ভারও আমি তোমাদের উপরেই ছাড়লাম। কিন্তু আমায় একটু বুঝিয়ে বলবে গোটা বিষয়টা?

বেচারাম : আমি বলি হারু দা? প্লিজ প্লিজ।

হারানিধি : (স্মিত হেসে) আচ্ছা বেশ, বল।

বেচারাম : হয়েছে কি কত্তা, আপনি হচ্ছেন এ গাঁয়ের মাথা গাঁওবুড়ো। ক্ষমতাসীন ব্যক্তি। আমরা আপনাকে মানিগন্যি করি। এইটা সয়নি বেঘো কাকুর। তিনি চেয়েছিলেন ক্ষমতার রাশ নিজের হাতে নিতে। অযোগ্য ব্যক্তি। সোজা রাস্তায় ইচ্ছেপূরণ অসম্ভব জেনে এই ঢুপুসের ব্যবস্থা করেছিলেন। 

ম্যাড়ানাথ মিত্র : এই ম্যাড়ার বুদ্ধিতে যেটুকু কুলোচ্ছে তা হলো, গাঁয়ের জানোয়ারদের ভয় পাইয়ে আপনি সমেত সব্বাইকে দেশছাড়া করে নিজের পেটোয়া লোকজন দিয়ে রাজত্ব স্থাপন আর পরে বাকিরা ফিরে এলেও তাদের দাবড়ে দাবিয়ে রাখা এই ছিল বেঘো কাকুর মতলব! 

শম্বর সেন : বাকিটা আমি, বাকিটা আমি। বলুনতো জেঠু এই ঢুপুস আসলে বস্তুটি কি? এই কপিওল্লা ও তার দলবল রাতের বেলা পুকুরধারের গাছে চড়ে পাকা পাকা ইয়াব্বড়ো সাইজের পেঁপে ফেলতো জলের মধ্যে, সাথে চোঙায় মুখ ঠেকিয়ে বিকট আওয়াজ করতো। 

সকলে সমস্বরে : একী কাণ্ড! কী শয়তানির রে বাবা! কতবড়ো দুরভিসন্ধিখানা এঁটেছে এরা! 

ভেটকি সিঙ্গি : কিন্তু তোরা এসব জানলি কি করে?

হারানিধি : আমার প্রথম থেকেই বিষয়টা সিওর ঘাপলা লাগছিলো, বলা নেই কওয়া নেই ঊণপাজুরে এক বিদ্ঘুটে জন্তু কিনা আমাজন আফ্রিকার গহীন অরণ্যের কম্ফর্টেবল জগত ছেড়ে আলপটকা টপকালো এই আমাদের পাতি জঙ্গলধামে! কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলাম না ঘোটালাটা ঠিক কোথায়।  আজ সভার মাঠে ব্যাঁচা শুনতে পায় ওদের কিছু কথাবার্তা। তারপর আমায় সেকথা বলতেই সন্দেহ আরোও বাড়ে। রহস্যের পর্দাফাঁস করতেই হবে। তাই সভায় ভয়ে খানিক ভড়কেই আছি এই ভাবটাই দেখালাম। সক্কলে ঘরবন্দী থাকবো এটাও বুঝিয়ে দিলাম ঠারেঠোরে। যাতে ওরা লাগামছাড়া আতঙ্কের ফন্দী বানাতে পারে। এবারে আমাদের পক্ষের বাছা বাছা কয়জনা মিলে সন্ধ্যের দিকে খুলিপোতার পাকুড়তলায় প্ল্যানিং হয় অপারেশন ঢুপুস। 

ভোলা ভল্লি : হারানিধির কথা মেনে সেইমতো তক্কে তক্কে থাকার ফল এই, কপিওল্লা আর ভণ্ডশালী হাতেনাতে গ্রেফতার। ব্যাঘ্রলাঞ্ছন অ্যান্ড কোম্পানির চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গেলো।

শম্বর সেন : এখন ফ্রাস্ট্রু খেয়ে দুব্বোঘাসে গলায় দড়ি না দেয় এরা। কিরকম আছাড়িপিছাড়ি খাচ্ছে দ্যাখো সবকটা। হি হি হি।
ষণ্ড সিং : গলায় দড়ি টড়ি পরের ব্যাপার শম্বর, আগে আমার ঢুঁসো থেকে তো বাঁচুক। আয় তো গবাদি, উচিত শিক্ষেটা আমরাই শুরু করি! 

গবাদি দত্ত : শুভকাজে দেরী কিসের দাদা! এইতো আমি শিং এ তেলটেল মেখে রেডী এক্কেবারে।

(তেড়ে গিয়ে ঢুঁসোতেই প্রাণপন চীৎকার অপরাধীদের। তারমধ্যেই ম্যাড়ানাথ মিত্র ঠেলে ফেললো ব্যাঘ্রলাঞ্ছনকে সিধে পচা জলে)

ব্যাঘ্রলাঞ্ছন ব্যগ্র : (রাগে ক্ষোভে দিশেহারা হয়ে)  এই এই এই আমায় ঠেললি কেন? যা খুশি তাই করবি! জানিসনা আমি কে! সবকটাকে দেখে নেবো! এই তিলেখচ্চরের ব্যাটাই সব শেষ করলো! ওকে আমি জ্যান্ত ছিঁড়বো! 

সকলে : তবেরে! চোরের মায়ের বড়ো গলা। মামদোবাজি পেয়েছো! মজা দেখাবো নাকি! 

ম্যাড়ানাথ মিত্র : কি বেঘো কাকু, বেঘোরে পড়লেন তো এইবার! মনে পড়ে, বছর পাঁচ সাতশো আগে আপনার ঊর্ধ্বতন এক পুরুষ এই ম্যাড়ানাথ মিত্তিরের ঊর্ধ্বতন এক পুরুষকে জল ঘোলানোর মিথ্যে দায়ে দাঁতে চিবিয়েছিলেন। আজ তাই আমি আপনাকে ঘোলা জলে মাছ ধরার সত্যি দায়ে পাঁকে চুবোলাম। দ্যাখ কেমন লাগে! ম্যাড়ার গোঁ! 

(ব্যাঘ্রলাঞ্ছন কেবল অসহায় ভাবে দাপাচ্ছে। সঙ্গীরা ভয়ে প্রায় অজ্ঞান।)

বেচারাম : এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন ভাই? মহাজন গত স পন্থা। বাকিদেরও ওই পাঁকেই…হেইয়ো জোয়ান হেইয়ো …এগোও ভাইসব!

ঝুনো কাঠুয়া : হ্যাঁ  হ্যাঁ। শুভস্য শীঘ্রম। আমিও নামি জলে। দাঁতগুলো নিসপিস করছে রে। কাঠুয়ার কামড়!

সকলে সমস্বরে : হুররে হুররে হিপ হিপ হুররে…ভুষ্টিনাশ করবো আজ বেঘো’র সাঙাৎ গুষ্টিরে!(সব্বাই হইহই করে ওদের নিয়ে এগোলো।) 

হারানিধি : ও মশায়েরা, কেমন বুঝলেন? এই তিলেখচ্চরের ব্যাটা হাড়খচ্চর থুক্কু হারুখচ্চর বলেছিলো না ধরুন ধরুন, আখেরে লাভ আপনাদেরই। মিলেছে? আর দেরী না করে এবার কাজে লেগে পড়ুন দেখি। চারিদিকে বড়ো আঁধার। আলো আনতে হবে। অনেক অনেক আলো। সব ভালো হবে। হবেই। 

Facebook Comments