সুজয়া ধর
আকাশ জুড়ে শুধু নীলের সমারোহ, মাঝে সাঝে সাদা কালোর উঁকিঝুঁকি। না ,এ কোন আকাশের বর্ণনা নয়; নীল মাধব সেন, মধ্য কলকাতার মহম্মদ আলি পার্কের লাগোয়া এই সরু গলি নামেও নীল,দেখতেও নীল। মাথা উঁচু করলেই দেখা যায় সার সার তারে ঝুলে রয়েছে নীল জিন্স। এই গলির প্রত্যেক বাড়িতেই রয়েছে ছোট ছোট দোকান,যাদের নতুন প্যান্ট কেনার সামর্থ্য নেই তাদের জন্য পরিশ্রম করে পুরনো কে নতুন ভাবে সাজিয়ে পরিবেশন করছেন এখানকার বাসিন্দারা।এটাই এদের একমাত্র রুজির উপায়।ভোর রাত থেকেই শুরু হয় এদের লড়াই।
শহরতলীর বিভিন্ন হাট থেকে পুরোনো জিন্স কিনে আনে। প্রথমে পুরনো জিন্স কাচা হয়, তারপর একটু ফ্যাকাসে প্যান্ট গুলো কে রঙে চোবানো হয়, এরপর তুলে স্তুপীকৃত করে রাখা হয় ; বাড়তি রঙ ঝড়ে পড়ে। এরপর চলে শুকানোর পালা। দরকার হলে সেলাই করা হয়, এবং ইস্ত্রি করে সম্পূর্ণ নতুন ছাঁচে ফেলে বিক্রির উপযোগী করে দোকানে তোলা হয়। মানগত বিচার করে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কলকাতা পুলিশ মর্গের পিছনের এই গলিতে ভোর থেকেই জিন্স কেনা বেচা শুরু হয়।হাওড়া, শিয়ালদহ, ধর্মতলার ফুটের বাজার এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় চলে যায় এই পুরোনো জিন্সের নতুন সংস্করণ। প্রায়৫০ বছর ধরে চলছে রিসাইকেল জিন্সের ব্যবসা। ঈদ আর দূর্গাপূজার সময় ব্যস্ততা বেড়ে যায় এদের বছরের অন্য সময়ের তুলনায়।
Levi’s, Wrangler,Lee এই ব্রান্ডে র জিন্স সবার পড়ার সামর্থ্য নেই, বছরের পর বছর ধরে এই জিন্স গলি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জিন্স পড়ার বাসনা পূর্ণ করছে। আক্ষরিক অর্থেই জিন্স গলি উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তর সেতুবন্ধন।
![](https://i0.wp.com/95canvas.com/wp-content/uploads/2023/10/DSC_8036.jpg?resize=680%2C1024&ssl=1)
Facebook Comments