সোমনাথ দাশগুপ্ত
[এই লেখাটা পুরোপুরি খুব চট করে পড়ে ফেলা যাবে না। ‘যাবে না’ মানে, এখানে যেটুকু লিখলাম সেটুকু হয়তো যাবে, কিন্তু ‘পুরোপুরি’ বলতে বোঝাতে চাইছি, এটা গত দেড়-দু মাস সময়পর্বের একটা জার্নি। পুরোপুরি সেই জার্নিটাকে ধরতে চাইলে, এ লেখার পাঠকের একটু সময় লাগবে। আর যেহেতু এই জার্নিটা এখনো চলছে, তাই এই লেখা মূলত একটা পথের সামনে এনে দেওয়া পাঠককে। রাজপথ বা গলিপথ নয়, নইলে তো ‘রাস্তা’ বা ‘গলি’ই লিখতাম, খুব অল্প মানুষের যাতায়াতের ফলে ঘাস মাঠের মধ্যে দিয়ে যেমন পায়ে চলা পথের আভাস থাকে তেমনই। যদি এ পথে হাঁটা মনস্থ করেন, পাঠক, এ লেখা তাঁকে হয়তো দেখিয়ে দেবে পাশেই কেমন একটা ঘেঁটুফুলের ঝোপ, এই যে একটা কামিনী ফুলের গাছ, ওই যে একটা ছোট্ট নদী, ওখানে বুঝি একটা ঝর্না বা আরেকটু এগিয়ে বুঝি দেখতে পাওয়া যাবে একটা উঁচু টিলা, পিছনে কি পাহাড়ও আছে একটা? পাশ দিয়ে একেবেঁকে চলে গেছে পথ? তবে তো পাঠকের আরো খানিকটা সময় লাগবে গন্তব্যে পৌঁছতে, ততটা এ লেখা যাবে না। সেটা পাঠকের ব্যক্তিগত জার্নির পথ। পায়ে চলা এ-পথে আরো কিছু মানুষ যদি হাঁটা মনস্থ করেন, চলতে শুরু করেন, এ লেখার সার্থকতা সেখানেই, সেটুকুই।]
বাংলা ভাষায় গল্প-প্রবন্ধ পড়ার সময় মাথায় থাকে, জনপ্রিয় বাণিজ্যিক আলোফোকাসের বাইরেও যে অসামান্য মেধা ও মননের চর্চা প্রতিনিয়ত হয়ে চলেছে তার স্পর্শ থেকে ব্যক্তিগত পাঠাভ্যাস যেন দূরে না সরে যেতে থাকে। কিছু মানুষের মতামত, পাঠপ্রতিক্রিয়াকে এজন্য বাড়তি মূল্য দিয়েই থাকি। এমন একজনের মুখেই প্রথম শুনেছিলাম পীযূষ ভট্টাচার্যের নাম ২০১২-র বইমেলার সময়ে। ভাষাবন্ধন থেকে প্রকাশিত ‘তালপাতার ঠাকুমা’ বইখানার রেকমেন্ডেশন দিয়ে সৈকতদা (চট্টোপাধ্যায়) জানিয়েছিল, “একটা তালগোল পাকানো লেখা ৯৪ পাতার, পড়া শুরু করেছি, পড়তে গিয়ে কিরকম একটা ঘেঁটে আছি। নিতান্ত “ব্যাখ্যাকাংলা” না হলে ট্রাই কোর।” তো, কিনে রাখা গেল।
নামটা চেনা হল, তাই পরের বছর ‘ভাষাবন্ধন’ থেকেই “সূর্য যখন মেষ রাশিতে” বইটাও কিনে ফেলা গেল।
আমার নিজের একটা সমস্যা আছে, কোনো অচেনা লেখকের লেখা প্রথম পড়ার আগে একটু প্রস্তুতি লাগে। তাঁর অন্যান্য লেখা, তাঁকে নিয়ে অন্যান্যদের মূল্যায়ন, নিজের লেখা বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এসব মিলিয়েই পড়ার অভ্যাস। এই করেই জমে যায় বই, লেখা, লেখক – পড়া শুরু করার আগের প্রস্তুতির অপেক্ষায়। পীযূষ ভট্টাচার্য ও জমেই গেলেন। খুব একটা চোখেও পড়ে না তাঁর বই, পুরনো কিংবা নতুন। ক্বচিৎ চোখে পড়ল তো বইমেলার কম ডিসকাউন্টে কিনব না, কলেজ স্ট্রীট থেকে কিনব বলে উইশলিস্টে ঢুকে যায় বই। চর্চাপদের “কৃষ্ণবর্ণ ষাড়ের পিঠে” ও সেই ভাবেই ঢুকে রইল। এদিকে কলেজস্ট্রীটও যাওয়া হয়না সারা বছর। যেদিন গেলাম, উইশলিস্ট নিয়ে যেতে ভুলে গেলাম। এভাবেই চলছিল। হঠাৎ গত ২০১৯-এর শেষে পল্টুদার কাঙাল হরিনাথ লিটিল ম্যাগাজিন লাইব্রেরিতে, হ্যাঁ বারাসতেই এটা, অন্য কাজে গিয়ে চোখে পড়ল ‘গল্পবিশ্ব’ পত্রিকার ২০০৭ এর আগস্ট সংখ্যায় একটা ক্রোড়পত্র করা হয়েছে পীযূষ ভট্টাচার্যকে নিয়ে। জানলাম প্রকাশিত বইগুলির ডিটেলস, জানা গেল গল্পগুলো সম্বন্ধেও। সাক্ষাৎকার পড়া হল। উৎসাহ বাড়ল। এবার বাকি বইপত্র যোগাড় করে পড়া শুরু করে ফেলতে হবে।
২০২০র শুরুটা নতুন প্রোজেক্টের চাপে একেবারেই জেরবার ছিলাম, নতুন আপদ শুরু হল লকডাউনের গৃহবন্দী দিন আর অসামাজিক একাকীত্বের পাঁচালি। এর মধ্যেই ‘গুরুচন্ডা৯’ সাইট তাদের কাজকর্মের পরিধি বাড়াতে শুরু করল। বিভিন্ন লেখকদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরিকল্পনা। ‘গুরুচন্ডা৯’-র সাথে ২০০৪ থেকে সম্পর্ক। প্রথম প্রবাসী হয়ে যখন দেড় বছর আংক্লেশ্বর আর তারপর দেড় বছর বরোদা কাটাতে হয়েছিল চাকরিসূত্রে, তখন থেকেই বাংলা লেখা, পড়া, আড্ডা মারা, তর্ক করার অবলম্বন ছিল একমাত্র বাংলালাইভ আর গুরুচন্ডা৯। ভার্চুয়াল আড্ডা দিতে দিতেই বন্ধুত্ব আর খুব কাছের হয়ে যাওয়া মানুষজন, গ্লোব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে যাদের অবস্থানচিহ্ন খুঁজে নিতে হয়। প্রায় দশ বছর হল পাকাপাকি ফিরেছি কলকাতায়, দূরত্ব বেড়েছে ভার্চুয়াল বন্ধুদের থেকে, তবু এখনো সাইটের কিছু কাজে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ এলে ফেরাতে মন চায় না। আমার উপর ভার পড়ল দেবর্ষি সারগীর সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন সাজানোর। ২০০৮ এ চাকরি বদলে ওমানের মাসকটে চলে যাওয়ার আগে শেষ পড়েছি দেবর্ষি সারগী। তখন পর্যন্ত আপডেট ছিল তাঁর প্রায় সমস্ত লেখার খবরের, কিন্তু এখন তো তবে নতুন করে শুরু করতে হবে আবার। যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখলাম সংগ্রহে থাকা ফোন নাম্বারটিও কাজ করছে না। দেবর্ষিবাবু মধ্যমগ্রামে এপিসি কলেজের ইংরিজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান পদ থেকে অবসরও নিয়েছেন এতদিনে। উপন্যাস সমগ্র গাঙচিল থেকে একখন্ড আর মিত্র ও ঘোষ থেকে দুখন্ড বেরিয়ে গেছে। খুব বেশি অপঠিত আর থাকছেন না আশা করা যায়, অন্তত বারো বছর আগে যত খুঁজে পেতে পড়তে হয়েছে তাঁর লেখা, এখন ততটা অন্তত নয়। বরং নিজেই দায়িত্ব নিলাম পীযূষবাবুর সাক্ষাৎকারের। এইসূত্রে পড়া হয়ে যাবে তাঁর সব লেখালেখি। বিবলিওগ্রাফি তৈরি করে, ইন্টারভিউ সব পড়ে আনকোরা নতুন সব প্রশ্ন তৈরি করে ফেলা যাবে তাঁকে জিজ্ঞাসা করার। এই সূত্রে যদি আরো বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় তাঁর লেখালেখি, পরিশ্রমী পাঠককে প্রাথমিক খোঁজাখুজির চৌকাঠ ডিঙোতে সাহায্য করা যায় একটু, তৃপ্তিই পাব।
পীযূষ ভট্টাচার্যের লেখালেখি সম্পর্কে জানতে প্রথমেই শুরু করলাম তাঁর রচনাপঞ্জি ও চর্চাপঞ্জি তৈরির কাজ, যেভাবে সাধারণত এগিয়ে থাকি। তাঁর সব লেখা আর তাঁকে নিয়ে সমস্ত আলোচনা নথিবদ্ধ করে খুঁজে নিয়ে পড়তে পড়তে এগোনো।
তিনি থাকেন চকভবানী, পুলক নিয়োগী লেন, বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর। সাহিত্যের ইয়ারবুক এ তাঁর নাম্বার ছিল। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, মেসেঞ্জারও তিনি দেখেন নিয়মিতই। যোগাযোগ হল।
৩ ডিসেম্বর ১৯৪৬ তাঁর জন্ম, বালুরঘাটেই, মামাবাড়িতে। শৈশব কেটেছে : কলকাতার চিৎপুর, অধুনা বাংলাদেশের নীলফামারী এবং দার্জিলিং জেলার সোনাদায়, ১৯৫৮ থেকে আবার বালুরঘাটেই বসবাস। শিক্ষা : প্রাইভেটে বি.এ. পার্ট ওয়ান পর্যন্ত। পেশা :পি.ডব্লিউ.ডি.-তে গ্রুপ ‘ডি’ থেকে শুরু করে করণিক হয়ে ২০০৬এ অবসর। ট্রেড ইউনিয়নের সক্রিয়তার কারণে রাজনৈতিক প্রতিকূলতায় কর্মজীবন কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, বছরের পর বছর ইনক্রিমেন্ট হয়নি, পদোন্নতি হয়নি সেসবের মর্মন্তূদ বিবরণী শুনলাম তাঁর মুখেই। বিবাহ : ১৭ এপ্রিল ১৯৭০, স্ত্রী : মাধুরী, সন্তান : দুই মেয়ে, যথাক্রমে পারমিতা ও সঙ্ঘমিত্রা, নাতনি-নাতি : ঐন্দ্রিলা ও ইমন। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে মালদায় ও দক্ষিণ কলকাতায়। আমি যখন ফোন করলাম, জানালেন সদ্য করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই। প্রচন্ড দুর্বল শরীর। তাছাড়া বালুরঘাটের পাট উঠিয়ে কলকাতার ফ্ল্যাটে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা সব হয়েই গেছে। লকডাউন ইত্যাদি না হলে এতদিনে শিফটিং হয়েও যেত। জিনিসপত্র প্যাকিং হয়ে রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে পাকাপাকি চলে যাবেন। বালুরঘাটে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই শুধু থাকেন। বাজার করার জন্য লোক রাখা হয়েছিল সুবিধের হয়নি। কাজের লোক রান্নার লোক না এলে খুবই সমস্যায় পড়ে যান।
তাঁকে জানিয়েছিলাম এর আগে যে ইন্টারভিউগুলি দিয়েছেন তার বিশদ প্রয়োজন, যোগাড় করে পড়ার চেষ্টা করব। তাতে জানা গেল বেশিটাই পাওয়া দুঃসাধ্য, পত্রিকা কপি দুষ্প্রাপ্য। তিনি নিজের সংগ্রহ থেকেই পড়ানোর ব্যবস্থা করবেন, কিন্তু সব বইপত্র, ফাইল, লেখা সংক্রান্ত কাগজপত্র প্যাকিং হয়ে রয়েছে। একা তাঁর পক্ষে সেগুলি আনপ্যাক করা সম্ভব নয়, ট্রান্সপোর্টের লোকেদের ডেকেছেন, তাদের অপেক্ষায় আছেন। আনপ্যাক হলে কিছু পাওয়া যাবে।
ইতিমধ্যে ইন্টারনেট এ মাধবী দাস এর খুব সাম্প্রতিক লেখা পড়লাম পীযূষবাবুকে নিয়ে।
পীযূষ ভট্টাচার্য, এক আলোকিত নাম, বাংলাসাহিত্য ওয়েবজিন, রবিবার, মার্চ ০১, ২০২০
তিনি লিখেছেন একটি প্রকাশিতব্য উপন্যাস ও প্রকাশিতব্য ৫০টি গল্পের কথা। ফোন করলাম তাঁকে কোচবিহারে। জানা গেল ‘তৃতীয় পরিসর’ থেকে ২০২০ জানুয়ারিতে প্রকাশ পেয়েছে আখ্যানসমগ্র-১, তাতে রয়েছে এতাবৎ প্রকাশিত সব কটি উপন্যাসই, অর্থাৎ পাঁচটি – ‘জীবিসঞ্চার’, ‘নিরক্ষরেখার বাইরে’, ‘তালপাতার ঠাকুমা’, ‘সূর্য যখম মেষ রাশিতে’ আর ‘নিরুদ্দেশের উপকথা’। শেষ উপন্যাসটি আগে আলাদাভাবে বই হয়নি কখনো, এই আখ্যানসমগ্রেই প্রথম উপন্যাস আকারে ছাপা হয়। ‘ভাষাবন্ধন’ পত্রিকায় অক্টোবর ২০০৪ এ প্রকাশিত “লুপ্ত পাঠ কিংবা নিরুদ্দেশের উপকথা” ও ‘মধ্যবর্তী’ পত্রিকায় প্রকাশিত “১৩ই আগস্ট” উপন্যাসদুটির গ্রহণ বর্জনের মাধ্যমে এর সৃজন।
তৃতীয় পরিসর-এর কর্ণধার সুদীপ্তকে আগে চিনতাম, যখন সে ‘চার্বাক’ পত্রিকা করত আর নবারুণ ভট্টাচার্য সংখ্যা করবে বলে পরিকল্পনা করছিল, তখন থেকেই। সে-সংখ্যাটা আর হয়নি, কিন্তু যোগাযোগ থেকে গিয়েছে। বইমেলায় দেখা হলে প্রতিবারই কিছু কথা হয়। নতুন কাজের পরিকল্পনা শুনি। সে জানাল আখ্যানসমগ্র-১ প্রথম সংস্করণ সমস্ত বিক্রি হয়ে গিয়েছে, এখন আর পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপা হয়ে যাবে ২০২১ এর জানুয়ারিতেই। তাতে নতুন ভূমিকা সংশ্লিষ্ট হবে। ৫০টি গল্প নিয়ে আখ্যানসমগ্রের দ্বিতীয় খণ্ড ওরাই করবে। গল্পগুলো কম্পোজও হয়ে রয়েছে। আমি জানতে চেয়েছিলাম গল্পগুলির প্রথম প্রকাশের তথ্য, পত্রিকার নাম আর সাল তারিখ। সুদীপ্ত জানাল বরেন্দু মন্ডল বইটার ভূমিকা লিখছেন। দীর্ঘ ভূমিকায় সে সব তথ্য থাকবে নিশ্চয়। ভূমিকা লেখা শেষ হলে ২০২১ এর জানুয়ারিতে আমায় সেই লেখা থেকে তথ্যগুলি সে পাঠাবে।
আরো জানাল, ইতিমধ্যে পীযূষ ভট্টাচার্যের লেখা সম্বন্ধে জানতে আমি আরেকজনের সাথে কথা কথা বলতে পারি, সে মূলত আখ্যানসমগ্র-১ এর কাজটা করেছে, পীযূষবাবুর লেখার সচেতন পাঠক। ধরলাম তাকে। সে কোনো সাহায্য করতে পারল না, সম্ভবত জীবিকাগত ব্যস্ততার জন্য। ফোনে কথা হল, হোয়াটসঅ্যপে প্রশ্ন পাঠাচ্ছি। নিরুত্তর। ফেসবুক আর ইন্টারনেট খুঁজে তখন দেখেছি, বালুরঘাট এর ‘উত্তরভাষা’ পত্রিকা কিছুকাল আগে, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬ নাট্যতীর্থ মন্মথমঞ্চে সন্ধ্যেবেলা পালন করেছে পীযূষবাবুর ৭১-এ পা দেওয়ার জন্মদিন মহাসমারোহে।
১৫ মিনিটের যে ছোট্ট তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে তাঁকে নিয়ে – ‘অন্তরঙ্গ পীযূষ’, অনুষ্ঠানের নামেই, ইউটিউবে সকলের দেখার জন্যে রাখা হয়েছে সেটি।
এখানেই প্রথম দেখলাম বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ। জানলাম তাঁর পিতা-মাতার নাম : জ্ঞানরঞ্জন ভট্টাচার্য ও নিভারানী ভট্টাচার্য
অনুষ্ঠানে পীযূষ ভট্টাচার্যের গল্পের উপর নির্মিত দুটি শর্টফিল্মও প্রদর্শনহয়েছিল, ‘নদী পুড়ে যাচ্ছে’ এবং ‘ভাসান’।
এছাড়াও, পীযূষ ভট্টাচার্যের উপর উত্তরভাষা পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, আর, তাঁর গল্পের বই ‘জলের বর্গক্ষেত্র’-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশও হয় সেদিন। তাঁর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেছিলেন সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক রাজীব চৌধুরী এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বরেন্দু মন্ডল। রাজীব চৌধুরীকে ‘ভাষাবন্ধন’-এর আমর্ম সংসপ্তক হিসেবে চিনি অনেকদিনই। ‘উত্তরভাষা’ পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক রঞ্জন খাঁ-র সাথে যোগাযোগ করলাম ফেসবুকেই, পত্রিকার পাতা থেকে পীযূষবাবুর লেখা প্রকাশের ডিটেল চেয়ে। তাঁর কাছে থাকা বইগুলির ডিটেলও যদি পাওয়া যায়, সেই আশায়।
বিবলিওগ্রাফি করতে দরকার প্রচ্ছদ, প্রকাশ-মুদ্রণ ডিটেল, উৎসর্গ, মুখবন্ধ আর গল্পক্রম। গল্পগুলির প্রথম প্রকাশের তথ্য তো আস্তে আস্তে খুঁজতে হবে। লাইব্রেরিওয়ার্ক। পীযূষবাবু জানিয়েছেন, প্রথম প্রকাশের তথ্য তাঁর কাছেও বিশেষ নেই। কিন্তু এবার সমস্যা হল, এই দুজনকে যা জিজ্ঞাসা করছি তারা সেই প্রশ্ন আর প্রয়োজন পীযূষবাবুকেই জানাচ্ছেন। কৌশিকবাবু হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো প্রয়োজনের তালিকা সরাসরি পীযূষবাবুকে ফরোয়ার্ড করছেন। অথচ আমি তো চাইছিলাম লেখককে যথাসম্ভব কম বিরক্ত করে কাজটা করতে। চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়েছে পীযূষবাবুর। এতটাই যে, কিছুক্ষণ লেখালেখি করতে করতেই চোখ থেকে জল গড়াতে থাকে। আতস কাচের সাহায্যে পড়াশুনা করেন, তাও দুঃখ করলেন, ভালো আতস কাচ পান না বালুরঘাটে। এই বয়সে, দুর্বল শরীরে আনপ্যাক করে তাঁর লেখাপত্র, বইয়ের সুচী তাঁকে দিয়েই খোঁজাতে যদি হয়, তবে পাঠক হিসেবে লজ্জা পাবার কথা নয় কি? ফলে অন্য আরো সূত্রের খোঁজ শুরু করতে হল। পরে অবশ্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ ডিটেলস কৌশিকবাবু পাঠিয়েছিলেন। প্রথমটি এই অন্তরঙ্গ পীযূষ অনুষ্ঠানটির ছবি, নিউজ পেপার কভারেজ আর ফেসবুক মন্তব্যসংকলন। সে সংক্রান্ত বাকি তথ্য ও ছবি ফেসবুক ইভেন্ট থেকে খুঁজে নেওয়া গেল।
অন্তরঙ্গ পীযূষ অনুষ্ঠানের ফটো অ্যালবাম
অন্তরঙ্গ পীযূষ অনুষ্ঠানের পর ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মন্তব্য
অন্তরঙ্গ পীযূষ অনুষ্ঠানের নিউজপেপার রিপোর্তাজ
সম্মানগুলির তালিকা পাওয়া গেল ফেসবুকে রাখা পত্রিকার পাতা থেকেই।
মধ্যবর্তী সাহিত্য পত্রিকার সংবর্ধনা ২০০২
কবিতাপাক্ষিক এর সম্মাননা
‘বিশিষ্ট সাহিত্যিক সম্মাননা ও পুরস্কার’ – উত্তরবঙ্গ নাট্যজগৎ
Award for distinguished service in the field of literature (2008)
‘শান্তি সাহা স্মারক পুরস্কার’ – পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি (২০১০)
কবি জীবনানন্দ স্মারক সম্মান – এবং বিকল্প (২০১১) [জীবিসঞ্চার উপন্যাসের জন্য]
বিশিষ্ট সাহিত্য সম্মাননা – রুদ্রকাল (২০১৩)
বিমলা বর্মন স্মৃতিস্মারক পুরস্কার – সংবেদন (২০১৫)
বদরীপ্রসাদ বন্দোপাধ্যায় সম্মান – কথাজাতক (২০১৫)
রাধামোহন মোহান্ত স্মারক সম্মান – দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রেস ক্লাব (২০১৫)
বর্ণালী স্মারক সম্মান (উত্তরবঙ্গের সাহিত্য সংস্থা “উত্তরের রোববার”এর আয়োজনে কলেজস্ট্রিট সংলগ্ন বইচিত্র আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত সাহিত্যসন্ধ্যায় প্রদত্ত)
দিবারাত্রি কাব্যের সম্মাননা
আমায় পীযূষ ভটাচার্যের লেখা পড়তে প্রথম উৎসাহ দিয়েছিল যে, সৈকত চট্টোপাধ্যায়, তার কাছে ছিল ‘জীবিসঞ্চার’ উপন্যাসিকাটি।
ফেসবুক থেকেই ইতিমধ্যে আরো দুজনের খোঁজ পেলাম। একজন রঞ্জন রায়, ফলাকাটা কলেজের অধ্যাপক। নিজের পোস্ট তিনি রাখেন “@ নির্বোধের ডায়রি থেকে” – শিরোনামে। পীযূষবাবুকে নিয়ে ০৯-১২-১৯ তারিখে একটি পোস্টে তিনি সম্যক আলোচনা করেন। পীযূষবাবুর প্রথম প্রকাশিত বইটি কবিতাগ্রন্থ। কবিতার এই একটিইমাত্র বই তাঁর। এ বিষয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন রঞ্জনবাবু আরেকটি ফেসবুক পোস্টে। এই আলোচনার ডায়রি তারিখ ০৪-০৬-২০২০
কবিতার বইটি একেবারেই দুষ্প্রাপ্য। যদি কপি থাকে এই আশায় যোগাযোগ করে জানলাম ১৯ দিন হাসপাতালে থেকে প্রায় মৃত্যুমুখ থেকে কোভিডযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে সবে বাড়ি ফিরেছেন, বইপত্র খোঁজাখুজি করার পক্ষে শরীর অসম্ভব দুর্বল । পরে রিপন সরকার, যাকে এই উপরেই তথ্যচিত্রের ভিডিওতে বলতে শোনা গেছে, বইটির ডিটেলস পাঠান।
অন্যজন তরুণ কবি, শতানীক রায়। নিয়মিতভাবে পীযূষবাবুর লেখা নিয়ে, বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া নিয়ে পোস্ট দিতে দেখেছি তাঁকে। গুরত্বপূর্ণ ছিল তালপাতার ঠাকুমা বিষয়ে তাঁর আলোচনা।
শতানীক খুব সাহায্য করলেন। প্রথমেই পাঠালেন চর্চাপদের গল্পগ্রন্থটি নিয়ে করা তাঁর আলোচনা।
এই আলোচনার অঙ্কুর ছিল শতানীকের একটি ফেসবুক পোস্টে। আনন্দবাজারে ছাপা হয়েছিল পুস্তক পরিচয় – কৃষ্ণবর্ণ ষাঁড়ের পিঠে – আনন্দবাজার পত্রিকা শনিবার ৩০ মার্চ ২০১৩, ১৬ চৈত্র ১৪১৯ । বইটার ডিটেলস পাঠাল সৈকতদা, নিজের কপি থেকে।
বরেন্দু মন্ডলের যোগাযোগ দিলেন শতানীক। বরেন্দুবাবু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ হেড করেন বর্তমানে। ৫০টি গল্প প্রথম বই করার কথা ছিল ‘সোপান’ প্রকাশনার তরফে, দুবছর আগেই। সব গল্প কম্পোজ হয়ে যাওয়ার পরেও তারা ফেলে রেখেছিল অনেকদিন। অবশেষে ‘তৃতীয় পরিসর’ দায়িত্ব নেয়। পুরো ব্যপারটার হোতা প্রথম থেকে বরেন্দুবাবুই। গল্পের বইটার ভূমিকা লেখার জন্য গোটা কম্পোজড ম্যাটারটা তার জিম্মায় এখন। ফোন করে জানালাম বিবলিওগ্রাফি বানাচ্ছি। খুবই উচ্ছ্বসিত হলেন। তিনি ছাত্রদের এই কাজ করতে উৎসাহ দিয়েও কৃতকার্য হননি জানিয়ে আমায় যথাসম্ভব সাহায্যের প্রতিশ্রুতিই দিলেন। জানালেন পীযূষবাবুকে নিয়ে একটা গোটা বইয়ের কাজ চলছে। অর্থাৎ পুরো বই জুড়ে তাঁর লেখার আলোচনাই থাকবে। বিবলিওগ্রাফিটিকে সেই বইতে ছাপতে চান বলেও জানালেন।
পীযূষবাবুই বলেছিলেন, তাঁকে নিয়ে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনার কাজ শুরু হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখলাম, এম. ফিল. হয়েছে বা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিখিলেশ রায়-এর গাইডেন্সে সম্ভবত রাজনৈতিক গল্প নিয়ে, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে, সম্ভবত সেন্ট জেভিয়ার্সেও কিছু কাজ হচ্ছে। বরেন্দুবাবু বলেননি যদিও, পরে জেনেছি তাঁর অধীনেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন এম. ফিল. করছে পীযূষ ভট্টাচার্যের সাহিত্যের কোনো এক দিক নিয়ে। তিনি বিভিন্ন বইয়ের ডিটেলস পাঠালেন। অনেক সুবিধে হল, বেশিরভাগই হয়তো পাওয়া সম্ভব ছিল না। প্রথমেই পাঠালেন উত্তরভাষার ২০১৬ ডিসেম্বর মাসের সংখ্যাটি।
এখানে রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা গ্রন্থ সমালোচনাটি আর পীযূষ ভট্টাচার্যের লেখাটি অন্য পত্রিকা থেকে পুণর্মুদ্রণ বলেই মনে হয়, কিন্তু উৎস উল্লেখ নেই। বরেন্দুবাবু নিজেও একটি বড় লেখা লিখেছিলেন এ বিষয়ে, সেটাও পাঠালেন।
পাঠালেন প্রকাশিতব্য আখ্যানসমগ্র-২ (৫০টি গল্প)-এর সূচী)। অমল বসু সম্পাদিত ‘প্রতিলিপি’ পত্রিকাতে ১৯৮০ সালে পীযূষবাবুর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়, ‘গরম ভাত’। এতকাল অগ্রন্থিত সেই গল্প এই প্রথমবার ৫০টি গল্প গ্রন্থভুক্ত হচ্ছে। গল্পগুলির পাশে বরেন্দুবাবুর হাতে লেখা প্রকাশকাল বা রচনাকাল দেওয়া আছে যদিও, কিন্তু পরে পত্রিকা প্রকাশ মেলাতে গিয়ে অনেক সময়েই গরমিল লক্ষ্য করেছি। পত্রিকা প্রকাশ-এর সে গরমিল বইতে গল্পের সাথে ছাপা প্রকাশকাল এর তথ্যের ক্ষেত্রেও রয়েছে অনেকক্ষেত্রেই। পীযূষবাবু সম্ভবত প্রকাশিত পত্রিকার পাতা থেকে নিজের লেখাটি আলাদা করে ফাইলবন্দী রাখেন। সেইটুকুই সংরক্ষিত। সব পত্রিকা গোটাটাই সংরক্ষণ করাও দুঃসাধ্য, অনেকই তো মোটা মোটা পুজোসংখ্যা। তাছাড়া তাঁর বক্তব্য, বেশিরভাগ লিটিল ম্যাগাজিনই স্বল্পায়ু। যখন প্রকাশিত হয়েছিল, হয়তো খুবই উৎসাহের আবহ ছিল, কিন্তু কালের নিয়মে অনেকেরই সম্পাদক প্রয়াত, বা হয়তো পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে, কপি পাওয়া সম্ভব নয়। তাদের উল্লেখ করার মানেই নেই কোনো। আবার কিছু লেখার পত্রিকা প্রকাশ উল্লেখ না করলে, বাকিদের উল্লেখও অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। তাই তিনি বইতে কোনো গল্পেরই পত্রিকা প্রকাশ উল্লেখ করেন না। বিবলিওগ্রাফির নিয়ম তো তা নয়, এতো একরকম ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা। এমনকি কোনো লেখার সাথে অলঙ্করণ থাকলেও সেগুলো উদ্ধার করা উচিত, ফলে কাজ কিছু কঠিন হল আর কি।
যে বইগুলি এখন আর পাওয়া হয়তো সম্ভবই নয় সেগুলির তথ্য বরেন্দুবাবু নিজের সংগ্রহ থেকেই দিলেন। প্রথমে এই বইটির প্রচ্ছদ বাদে বাকি তথ্যের পাতাগুলি পাঠিয়েছিলেন, পরে আর খুঁজে পাননি বইটিকেই। পীযূষবাবুরই দ্বারস্থ হয়ে প্রচ্ছদটি সংগ্রহ করা গেল বটে, তবে আলোর প্রতিফলনের সমস্যার কারণে আবার প্রচ্ছদটির ছবি সংগ্রহ আবার করতে হল রিপন সরকারের বদান্যতায়।
যাদবপুরে যেহেতু এনিয়ে কাজ চলছে, কিছু বই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে রয়েছে জানালেন।
জানিনা, দীপ প্রকাশন বা নয়া উদ্যোগ-এ খোঁজ করলে এই বইগুলো এখনো পাওয়া যাবে কিনা। ‘নির্বাচিত গল্প’তে বেশিটাই আগের সংকলনের গল্প হলেও কিছু নতুন অগ্রন্থিত গল্পও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
‘নিরক্ষরেখার বাইরে’ যেমন আর পাওয়া সম্ভব নয়। প্রকাশনা সংস্থা ‘প্রমা’ তো আর নেই।
এসবের পরে বরেন্দুবাবু ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ব্যক্তিগত সমস্যাও তাঁর ছিল কিছু। ফলে, বেশ কিছু গল্পের প্রথম প্রকাশের যে সাল বইতে গল্পের শেষে ছাপা হয়েছে সেটুকু উদ্ধার করা বাকি রয়ে গেল।
শতানীক এর মধ্যে পাঠালেন জলের বর্গক্ষেত্র বইয়ের ডিটেলস। কভারের ছবি পাঠাল সৈকতদা।
সদ্যই কেনা, বইটি এখনো পাওয়া যায় ধ্যানবিন্দুতে। বিবলিওগ্রাফির কাজ শুরু হওয়ায় উৎসাহ পেয়েই কিনল সম্ভবত। আমিও খোঁচাচ্ছিলাম বইগুলো পড়ে নিয়ে সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন বানানোয় হাত লাগানোর জন্য।
শতানীকই জানালেন, এবং পাঠালেন, তৃপ্তি সান্ত্রার লেখা সূর্য যখন মেষ রাশিতে – উপন্যাসটি নিয়ে একটা বড় লেখা। তৃপ্তি সান্ত্রা প্রতিষ্ঠিত লেখিকা, যত্ন নিয়ে লিখেছেন ‘চিন্তা’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যায়। পত্রিকা সম্পাদক রাহুল দাশগুপ্তের সাথে আলাপ হয়েছিল সোভিয়েত ব্লগের কাজের সময়। তিনি যে নিজের পত্রিকা শুরু করেছেন জানাই ছিল না। এই অবসরে অবশ্য পুরনো আলাপ ঝালানো হয়নি। নেট এ দেখলাম ‘চিন্তা’ পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যাও খুবই সুন্দর হয়েছে।
শতানীকের উপদেশে যোগাযোগ করলাম রিপন সরকার-এর সঙ্গে। অপরিসীম সাহায্য করলেন। এমনকি যে বইটি অন্য কারো কাছে পাওয়ায় যাচ্ছিল না, সেটি পীযূষবাবুর বাড়ি গিয়ে নিয়ে এলেন তিনি।
পীযূষবাবুর সাথে প্রায় আত্মীয়ের মতোই সম্পর্ক তাঁর। কলকাতায় চলে আসার সময় পীযূষবাবুর সমস্ত বই এক কপি অন্তত বালুরঘাটে তাঁর কাছে থাকা সুনিশ্চিত করা গেছে বলে জানা গেল।
‘কুশপুত্তলিকা’ বইটি পাওয়া আজ আর কতটা সম্ভব জানিনা। প্রথম গল্পসংকলনের বই পীযূষবাবুর।
‘পীযূষ ভট্টাচার্যের গল্প’ বইটা একেবারেই পাওয়া যাচ্ছিল না কারোর কাছে।
এর মধ্যে কৌশিকরঞ্জন খাঁ দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ডিটেলসটি পাঠিয়েছেন, ‘কীর্তিমুখ’ বই।
বইয়ের ‘কীর্তিমুখ’ গল্পটা প্রথম প্রকাশিত হয় চতুরঙ্গ ৬০ বর্ষ ১ সংখ্যা, বৈশাখ-আষাঢ় ১৪০৭, (আগস্ট ২০০০) সংখ্যায়। হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউটের সহায়তায় সেন্টার ফর স্টাডিজ অফ স্যোসাল সায়েন্সেস যে বিশাল সংখ্যায় লিটিল ম্যাগাজিন ডিজিটাইজ করে আর্কাইভ করেছে ক্রসএশিয়া প্ল্যাটফর্মে সেখানেই পড়তে পারবেন এটি।
বর্তমানে আত্মজৈবনিক উপন্যাস “অন্তেবাসী” তিনি ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ‘চারনম্বর প্ল্যাটফর্ম’ ওয়েবজিন-এ। এখনো অবধি প্রকাশিত হয়েছে ১৯ টি পর্ব।
আরেকটি উপন্যাস রচনার কাজও চলছে। নাম – ‘উৎসর্গের উপকথা’। একে তিনি বলছেন রিভার্স মনসামঙ্গল। নিঃসন্দেহে খুবই আকর্ষক কাজ হতে চলেছে এটিও। ‘একালের রক্তকরবী’ তে প্রকাশিত বড়গল্প ‘উৎসর্গের উপকথা’ ও ‘মধ্যবর্তী’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘শূন্য ডিঙার নাম শঙ্খচূড়’ কে একত্রে গেঁথে অবশ্যই আরো বিশদে গ্রহণ বর্জন পুনর্লিখনের মাধ্যমে এই সৃজনের কাজ চলছে। সমস্যা হল এই লেখার জন্য যে বিপুল পড়াশোনা করা প্রয়োজন, শিফটিং এর জন্য প্যাকিং-এ ঢুকে থাকায় সেই বইপত্র পড়া দুষ্কর হয়েছে। ফলে উপন্যাসটি লেখার কাজ আপাতত স্থগিত রয়েছে।
‘গল্পবিশ্ব’ ও ‘উত্তরভাষা’র পরে সমীর চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘তমসুক’ নামক একটি পত্রিকা পীযূষ ভট্টাচার্য ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। শতানীক এ তথ্য জানান এবং নিজের কপি থেকে পুরোটাই ছবি তুলে পাঠান পড়ার জন্য। তার আগেই রিপনবাবুও পাঠিয়েছেন এই পত্রিকার প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র।
সমীর চট্টোপাধ্যায়ের সাথেও কথা হল। তাঁর বয়স আশির কোঠায়। তিনিও স্ত্রীর সাথে একলাই থাকেন দুজনে। জানালেন পত্রিকা সমস্ত কপিই রঞ্জন রায়-এর কাছে রাখা আছে। পোস্ট করে পাঠানোও সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে। আশা করি রঞ্জনবাবুর সাথে যোগাযোগ করে পত্রিকাটির হার্ড কপি পাওয়া যাবে। শুনলাম ক্রোড়পত্রের সাথে আর কিছু লেখা জুড়ে ওটিকে সম্পূর্ণ বই করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সেটিই বরেন্দুবাবু কথিত বই কিনা নিশ্চিত হতে পারিনি এখনো। রিপনবাবু আরো পাঠালেন, উত্তরভাষায় ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকার।
বাদবাকি সাক্ষাৎকার বিষয়ে যেটুকু জেনেছি, প্রথমটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘অশোকবন’ পত্রিকায়। ‘রূপান্তরের পথে’ নামক শুভ্র মৈত্র সম্পাদিত মালদা থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাতেও বেরিয়েছিল একটি কথোপকথন। ‘নান্দনিক’ নামক দীপক কর সম্পাদিত গোকুলপুর, কাটাগঞ্জ, নদীয়া থেকে ‘নান্দনিক সাহিত্য সংসদ’ এর মুখপত্র একটি পত্রিকাতে সাম্প্রতিকতম সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হতে চলেছে, প্রায় ৪৫ পাতা জুড়ে। একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল জলপাইগুড়ির ‘দ্যোতনা’ পত্রিকায়, যার সম্পাদক গৌতম গুহরায়। সেটির দুটি অংশ, একটি – প্রশ্নের হাতে লিখিত উত্তর ও অন্যটি – প্রশ্নোত্তরের অডিও থেকে হাতের লেখায় ট্রান্সক্রিপ্ট করা। সে হাতের লেখার পাঠোদ্ধার করে বর্তমানে কম্পোজ করা চলছে। অডিও রেকর্ডিং টি সম্ভবত অলভ্য বর্তমানে। এই সবগুলি না পড়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করা সম্ভব নয়, উচিত তো নয়ই। অপেক্ষাই করছি সমস্ত পড়তে পাওয়ার।
রিপন সরকার নিজে ‘সূর্য যখন মেষ রাশিতে’ উপন্যাস বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন উত্তরভাষা পত্রিকায়। সেটিও পাঠালেন।
উপরি পাওয়া গেল পীযূষবাবুর গদ্য নবারুণ ভট্টাচার্যকে নিয়ে, যা ঐ সংখ্যাতেই প্রকাশিত হয়েছিল।
হে সখা – চিরসখা (উত্তরভাষা, ৭ বর্ষ ২ সংখ্যা, পৌষ ১৪২১, ডিসেম্বর ২০১৪)
শতানীকের পোস্টের কমেন্ট থেকে পরিচিতি হয়েছিল পুরুষোত্তম সিংহ-র সাথে।
তিনটি প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি পীযূষবাবুর সাহিত্য নিয়ে। দুটি ইন্টারনেটে প্রাপ্য, ‘চৌকাঠ’ ও ‘শব্দের মিছিল’ ওয়েবজিন-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
আরেকটি লেখা সরাসরি বইতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যদিও সেটাতে অন্য আলোচনার মধ্যে স্বল্প পরিসরে পীযূষবাবুর উল্লেখ হয়েছে।
অন্য একটি অ্যাকাডেমিক আলোচনা গ্রন্থভুক্ত, দেখার সুযোগ হয়নি – “কুহক বাস্তবতা ও ‘তালপাতার ঠাকুমা’ (২০১২) : একটি পর্যালোচনা” – দেবস্মিতা শীট (গ্রন্থ : বাংলা উপন্যাসের দিক্ দিগন্ত – সম্পা: বিকাশ রায়, ইয়াসমিন বিশ্বাস, প্রকাশনা – সংবেদন) পৃ ৭২৯-৭৩৭
এ বাদে, নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘তালপাতার ঠাকুমা’ পুস্তক পরিচয় ছাপা হয়েছিল আফিফ ফুয়াদ সম্পাদিত ‘দিবারাত্রির কাব্য’ পত্রিকায়। আরো অনেক আলোচনাই নিশ্চয়ই নানা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ধীরে ধীরে জানা যাবে সেসমস্ত।
পীযুষ ভট্টাচার্যের যে সমস্ত গল্প যে বিভিন্ন গল্প সংকলনের অন্তর্ভুত হয়েছে, তার অন্তত দুটি হল –
- বোধনপর্ব (উত্তরায়ণ, উত্তরবঙ্গবাসী লেখকদের গল্প সংকলন, বইমেলা ২০০৬, সম্পা: আলোক গোস্বামী, ISBN – 81-7332-486-4, পুনশ্চ)
- তদন্ত সাপেক্ষ একটি কাহিনী (নকশাল আন্দোলনের গল্প, সম্পা: বিজিত ঘোষ, জানু ২০০৮ দ্বিতীয় সংস্করণ, ISBN – 81-7332-258-6, পুনশ্চ)
শ্রীধর মুখোপাধ্যায় কিছু গল্পের অনুবাদ করেছেন ইংরিজিতে, ‘Instilling Life and Other Stories’ নামে সেই অনুবাদ প্রকাশের অপেক্ষায়। ‘তালপাতার ঠাকুমা’-র ইংরিজি অনুবাদও চলছে শুনেছি। অনুবাদক মহিলার সাথে বর্তমানে প্রায়শই আলোচনা চলে পীযূষবাবুর, এই অনুবাদের গঠনপর্বে। প্রবন্ধগুলিও গ্রন্থবদ্ধ হতে চলেছে। সব প্রবন্ধের তালিকা করতে পারিনি, ফেব্রুয়ারিতে উনি কলকাতায় আসতে আসতে সেগুলি কম্পোজ হয়ে যাবে বলেই শুনলাম। যেটুকু জানা গেছে তার নোট রইল
খণ্ডাংশ জীবন – উত্তরভাষা এপ্রিল ২০১৫ আমার দেবেশ রায় - চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম জুন ১, ২০২০ আত্রেয়ীর তীর ধরে ফেরা বাচকের ভূমিকায় – (? , কলাম: ভূমিপুত্র, ছবি সন্দীপ পাল) পুনঃপ্রকাশ - উত্তরভাষা ৯ বর্ষ ২ সংখ্যা, শীত সংখ্যা ডিসেম্বর ২০১৬ (১৪২৩) যদু মধু ফালটুসের কথা অকথা প্রসঙ্গে কিছু কথাবার্তা – (বইপড়া – যদু মধুর জার্নাল – মধুময় পাল – নয়া উদ্যোগ) – [ভাষাবন্ধন ২০০৮ জুলাই, পৃ ৫৪-৫৫] অমিয়ভূষণের ট্রমা প্রসঙ্গে রমাপ্রসাদ নাগ এবং কিছু স্বগোতোক্তি – (বইপড়া – অমিয়ভূষণ ট্রমা চিহ্নিত এপিক – রমাপ্রসাদ নাগ – ভাষাবন্ধন) – [ভাষাবন্ধন ২০০৯ জানু-ফেব্রু পৃ ৬৬-৬৮] হে সখা – চিরসখা (উত্তরভাষা, ৭ বর্ষ ২ সংখ্যা, পৌষ ১৪২১, ডিসেম্বর ২০১৪) জল যাই জল আসি (গ্রন্থ আলোচনা, দিবারাত্রির কাব্য জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন ২০১০) নবারুণ ভট্টাচার্য কে নিয়ে আরো একটি লেখা এশিয়াটিক সোসাইটি – পল্লব সেনগুপ্তর কাছে খোঁজ নিতে হবে সুধীর চক্রবর্তী কে নিয়ে লেখা রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায় কে নিয়ে ২ টি লেখা অক্ষরেখা মহাশ্বেতা দেবী সংখ্যায় লেখা জগদীশ গুপ্ত কে নিয়ে অল্প বয়সে লেখা সাহিত্য অ্যাকাদেমীতে লেখা সারামাগো-কে নিয়ে লেখা মার্কেজ-কে নিয়ে লেখা মাসিক কবিতাপত্র / এবং বিকল্প পত্রিকায় লেখা – সম্পাদক – রাজীব সিনহা আশাপূর্ণা দেবীর গৃহস্থালীর নারীবাদী ন্যারেশন বিষয়ে লেখা রবিশংকর বল এর ৫-৭ টা উপন্যাস নিয়ে লেখা তেভাগা আন্দোলন বিষয়ে লেখা প্রতিলিপিতে ’৫০ এর মন্বন্তর বিষয়ে লেখা ইংরিজিতে UGC লেকচার – International History Conference ইংরিজিতে Mythical approach of History of Literature (World Bengal Literature Summit – Oxford / University of Calcutta)
তৃতীয় পরিসর-এর বরেন্দু মন্ডলের সম্পাদনায় ৫০টি গল্পের পাশেই রাজীব চৌধুরীর সম্পাদনায় শ্রেষ্ঠ গল্প-এর কাজও চলছে, সেটাও সম্ভবত ৫০ টি মতো গল্পই হবে। শীঘ্রই প্রকাশের পরিকল্পনা শুনলাম। এছাড়া অগ্রন্থিত প্রচুর গল্প তো রয়েছেই। যেটুকু জানা গেছে তার নোট রইল। অগ্রন্থিত গল্পগুলিও একটি বই হিসেবে প্রকাশিত হতে চলেছে বলেই জানা গেল।
খরা (প্রতিলিপি) শেষ রাতে ট্রেন (প্রতিলিপি) পদস্খলন (?) বংশধর (অন্যদিন) ব্যাধি (অন্যদিন) বানপ্রন্থের মহাবিষুব (অন্যদিন) উদ্ধারপর্ব (অন্যদিন) শশধর জাগুয়া (অন্যদিন) কালুয়ার কাল্লু (সাতরঙ) প্রতিপক্ষ (বালুরঘাট বার্তা) গবেষণা (অনুসন্ধানী চোখ) অনন্ত কাহিনী (মধুপর্ণী) নদীর বন্যা (জনরোল) সক্ষেপে করুণাময় (অশোকবন) সনাক্তকরণ (বর্তিকা / নন্দন) ভাঙা শিলালিপি (উত্তরবঙ্গ সংবাদ) দোনলা বন্দুক (দৈনিক বসুমতি) অসুখ (আকাল) চল মিনি (প্রতিদিন) নির্ধারিত দেড় মাস (প্রতিদিন) চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম (২ বর্ষ ৩ যাত্রা, জুলাই ১, ২০১৮) বাতিল কর্মসূচি (অভিযেক) বৃষ্টির রূপকথা (কালি ও কলম) মধ্যদিন মধ্যরাত (একালের রক্তকরবী) সাফাই অভিযান (?) ভালোবাসার রঙ নীল: ভালোবাসার রঙ গোলাপি ? (অনুষ্টুপ) লুপ্ত পাঠ কিংবা নিরুদ্দেশের উপকথা – (ভাষাবন্ধন) কাপাসতুলোর মুক্তোর বীজ – দিবারাত্রির কাব্য কোনো এক বিষ্যুৎবারের গল্প – (ভাষাবন্ধন) মাঝি গ্যালিভার ও অন্যান্য লিলিপুট (কথক) জার্সি গরুর রচনা – (উত্তরভাষা), চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম (১ বর্ষ ৮ যাত্রা, ডিসেম্বর ১, ২০১৭) তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে – (খোয়াব ওয়েবজিন) একটি রহস্য গল্প – (মল্লার)
রচনাপঞ্জি ও চর্চাপঞ্জি তৈরির সঙ্গে বাধ্যতই চলছে পত্রিকা প্রকাশের তথ্য খোঁজা। পীযূষবাবু নিজে যতদূর সম্ভব সাহায্য করেছেন। এছাড়াও সাহায্য পেলাম আরো অনেকের থেকে, যেমন – সৌম্যেন পাল পাঠালেন অনুষ্টুপে প্রকাশিত গল্পের তথ্য, সদ্য পি এইচ ডি পেপার সাবমিট করা প্রত্যুষ পাল জানালো অমৃতলোক-এ প্রকাশিত একটি গল্পের কথা, একালের রক্তকরবীতে প্রকাশিত একটি গল্পের নাম জানালেন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, আরেকটির বিকাশ গণ চৌধুরি। বাকি নিজের সংগ্রহের পত্রিকা, নেট ঘেঁটেঘুটে যা পাওয়া গেল কুড়িয়ে বাড়িয়ে তা দিয়ে একরকম তৈরি হল, হয়ে চলেছে তথ্যপঞ্জী। আরো বহু লেখার খোঁজ পাওয়া বাকি। স্বতন্ত্রভাবে এ কাজ এগোতে বেশ কিছু পত্রিকার ফাইল কপি আর্কাইভ ধরে খোঁজা দরকার যেমন, অমল বসু সম্পাদিত ‘প্রতিলিপি’, প্রদীপ ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘একালের রক্তকরবী’, শতদল মিত্র সম্পাদিত ‘কথক’, অজিতেশ ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘মধুপর্ণী’, সুরজিৎ ঘোষ সম্পাদিত ‘প্রমা’, নবারুণ ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘ভাষাবন্ধন’, বিশ্বরূপ দে সরকার সম্পাদিত ‘মধ্যবর্তী’, শুভময় সরকার সম্পাদিত ‘মল্লার’, এমনকি ‘নন্দন’, ‘বসুমতী’, ‘আজকাল’, ‘প্রতিদিন’ ইত্যাদি বেশ কিছু পত্রিকা। কয়েকটিতে যোগাযোগ করা গেছে, কেউ কেউ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খুঁজে দেখার, কোনো ক্ষেত্রে সম্পাদকের প্রয়াণ, প্রকাশনার বিলুপ্তি, আর্কাইভ-এর অভাব তথ্যপ্রাপ্তির অসম্ভাব্যতার ইঙ্গিতই দিয়েছে। আফিফ ফুয়াদ তাঁর সম্পাদিত ‘দিবারাত্রির কাব্য’ তিন দশকের সব সংখ্যা খুঁজে তালিকা দিয়েছেন। আবার অমল বসু জানিয়েছেন ১৯৯৫ এর বন্যায় তাঁর পত্রিকা সমস্ত ভেসে গেছে। পরে বন্ধুরা গোটা চারেক সংখ্যা দিয়ে গেছিল, সেকটিই রয়েছে। অজিতেশ ভট্টাচার্য মারা যাওয়ার পর তাঁর সমস্ত পত্রিকা বালুরঘাট কলেজে দান করা হয়েছে। আশার কথা পীযূষবাবু, তাঁকে পাঠানো তথ্যপঞ্জিতে, নিজেই প্রথম প্রকাশের মিসিং তথ্যাদি যতদূর সম্ভব ভরাট করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে কিছু গল্প বেশ কিছু পত্রিকায় একাধিকবার প্রকাশ পেয়েছে। কখনো সে তথ্য ওঁকে জানানো হয়েছে, কখনো অনুমতিটুকুও না নিয়ে, এমনকি প্রকাশের তথ্যও না জানিয়ে শুধুমাত্র যে পত্রিকা থেকে গল্পটি নেওয়া, তাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লেখা পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। ফলতঃ, সেরকম প্রকাশের কিছু তথ্য তাঁর কাছেও নেই। আশা করি নিয়মিত দেখা করা গেলে আর তাঁর লেখার ফাইলপত্র ঘাঁটতে পারলে তথ্যপঞ্জি সম্পূর্ণ করতে পারব বর্ষীয়ান লেখকের চোখের উপর অত্যাচার না করেই। মনে করি, তাঁর মাপের লেখকের সমস্ত রচনাই মলাটবদ্ধ থাকা উচিত সহজলভ্য পাঠসম্ভাব্যতায়। এবং চাইব, সমস্ত লেখার প্রথম প্রকাশ, সমস্ত একক গ্রন্থগুলি স্ক্যান করে আর্কাইভ হিসেবেও থাকুক ভবিষ্যৎ গবেষনার সুবিধার্থে।
পাঠক নিশ্চয় লক্ষ করেছেন, এই গদ্যে একটি বাক্যও ব্যয় হয়নি লেখকের লেখার বৈশিষ্ট বর্ণনায় বা অসাধারণত্ব বিশ্লেষনে। সহজ কারণ, আরো অনেকেই সেকাজ করেছেন। তাদের লেখাগুলি পড়ার সুযোগ করে দেওয়াই বেশি জরুরী মনে করেছি। নিজে সমস্ত লেখা পড়ে উঠলে একদিন হয়তো সামগ্রিকভাবে এবং প্রতিটি একক রচনা বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করার চেষ্টা করব, কিন্তু মনে করছি সেটা এখুনি ততটা জরুরী নয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-ছাত্র শিক্ষকরা সেকাজে রত হয়েছেন। আগামীতে পাঠক হিসেবে নানা সন্দর্ভ আমরা পেতে শুরু করব। তার কিছু অ্যাকাডেমিক রেফারেন্স কন্টকিত বোরিং হতে পারে, আবার, কিছু হতেই পারে মেধা মনন ও যুক্তিবিন্যাসে নতুন দিগদর্শনে অপূর্ব আকর্ষক।
শুরুতে যেমন বলেছিলাম, এ লেখা গন্তব্যে পৌঁছয়নি এখনো। পাঠককেও তাই কোথাও পৌঁছে দেওয়ার দায় নেই এর। ইতিমধ্যে যদি হাইপারলিংক করা লেখাগুলি পড়তে পড়তে পীযূষ ভট্টাচার্যের লেখা পছন্দ করতে শুরু করে থাকেন আর সমস্ত লেখা খুঁজে পেতে পড়ে ফেলা মনস্থ করেন, তবে হে সুধী পাঠক, আপনিও চলতে শুরু করেছেন সে পথে, খুব কম মানুষই যার যাত্রী। দেখা হবে আবার কোথাও অন্য কোনো দিন, পথের পাশেই অথবা গন্তব্যে।
[ইতিমধ্যে আংশিক সম্পূর্ণ হওয়া রচনাপঞ্জি ও চর্চাপঞ্জি পাঠিয়েছি বরেন্দু মন্ডলকে। পীযূষ ভট্টাচার্যকে তাঁর জন্মদিনে উপহার হিসেবেই পাঠিয়েছি তথ্যপঞ্জির যথাসম্ভব শেষ আপডেট। তা সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে গেছে এম. ফিল. রত গবেষকদের গাইডদের কাছে। আরো খানিক এগোনো অবস্থায়, পঞ্জিটিকে এখানেও রাখলাম পরিমার্জনা চলতে থাকা গুগুলডক হিসেবে, সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী মানুষই যাতে তা পড়তে পারেন। হয়তো কারো অ্যাকাডেমিক পেপারের অংশ হয়েই ঢুকে যাবে এই কাজটুকু, এমনকি হয়তো স্বীকৃতিবিহীন ভাবেই। তবু, বাংলাভাষার একজন সাধারণ পাঠকেরও যদি কাজে লাগে এ লেখা, সেই ভরসায় সকলের ওপেন অ্যক্সেসের জন্য রইল আমার মাস দুয়েকের পরিশ্রমটুকু, এখনও পর্যন্ত সাহায্য যাঁরা করেছেন, এ লেখায় তাঁদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও তাঁদের অবদানের স্বীকৃতিসহ। গন্তব্যে পৌঁছনো পর্যন্ত, অর্থাৎ বিবলিওগ্রাফির কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত, গুগুলডকটি আপডেট হতেই থাকবে। মানে, ধরে নেওয়া যেতেই পারে লেখাটা এখানেই পুরোপুরি শেষ হয়ে যাচ্ছে না, তাই, প্রিয় পাঠক, এই লেখাটা ‘পুরোপুরি’ খুব চট করে পড়ে ফেলা যাবে না।]
[এই লেখা এবং এতে ব্যবহৃত ও উল্লিখিত সমস্ত রচনাই তাদের লেখক, প্রকাশক বা সম্পাদকের কপিরাইটভুক্ত। ভারত ও আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন অনুযায়ী এগুলির সত্ত্ব সংরক্ষিত। এখানে সেগুলির উল্লেখ বা নিদর্শন কেবলমাত্র পাঠকের ব্যক্তিগত পাঠ ও পীযূষ ভট্টাচার্যের লেখালেখি নিয়ে চর্চা, চর্যা ও প্রসারের স্বার্থে। কোনো বাণিজ্যিক স্বার্থে এগুলির ব্যবহার অভিপ্রেত নয়। সংশ্লিষ্ট লেখক ও পত্রিকা সম্পাদক আমাদের সকলের কৃতজ্ঞতাভাজন।]
Facebook Comments